১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ
The Salient Features of the Constitution of Bangladesh of 1972 যে কোন দেশের সংবিধান নির্দিষ্ট কতকগুলাে বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। বাংলাদেশের সংবিধান-এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের সংবিধান বিভিন্ন দিক হতে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও অনন্য। বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে অধ্যাপক রওনক জাহান (Professor Rounaq Jahan) লিখেছেন যে, "The Constitution of Bangladesh is an interesting document since it is an attempt to facilitate political development in Bangladesh according to the Indian model. The Constitution incorporates a number of provisions with an eye to ensure the stability of the system." PS বাংলাদেশের সংবিধান হচ্ছে একটি কৌতুহলােদ্দীপক দলিল, কারণ এতে ভারতীয় মডেল অনুসারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার একটি প্রচেষ্টা। এ পদ্ধতিতে স্থায়িত্বের জন্য সংবিধানে কতিপয় শর্তের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে । ভারতীয় মডেল অনুসরণ করে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধানে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও গণপরিষদ সদস্যবৃন্দ চারটি প্রধান বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। যথা ঃ সংসদীয় গণতন্ত্র (Parliamentary Democracy), সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি (Socialist Economy), একটি একক কর্তৃত্ব সম্পন্ন দল (Single Dominant Party) এবং ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ (Secular Ideology)
১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধান স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই শুধু রচিত হয় নি, এর আর একটি উল্লেখযােগ্য দিক হচ্ছে, এটি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধানগুলাের অন্যতম , নিচে বাংলাদেশের সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ আলােচনা করা হলাে :
১। সর্বোচ্চ আইন বাংলাদেশ সংবিধান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন। এ সংবিধান জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে দেশের মহত্তম দলিল। যদি. কোন আইন এ সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যহীন হয় তাহলে সে আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততটুকু বাতিল হবে। সংবিধানে ঘােষণা করা হয়, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ' এবং জনগণের পক্ষে সে ক্ষমতার প্রয়ােগ কেবল এ সংবিধানের অধীনে ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে।
২। লিখিত দলিল ঃ বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত এবং অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত দলিল। সর্বমােট ৮৩ পৃষ্ঠায় এতে ১১টি ভাগ, ১৫৩ টি অনুচ্ছেদ; ১টি প্রস্তাবনা ও ৪টি তফসিল রয়েছে।সংবিধানে সরকার পরিচালনার সাধারণ নীতিসমূহ সুবিন্যস্তভাবে লিখিত রয়েছে। সরকার ও প্রশাসন সম্পর্কিত বিধিমালা এতে স্থান পেয়েছে। প্রতি ছত্রে এর রয়েছে সৃষ্টিধর্মী সুর।
৩। দম্পরিবর্তনীয় সংবিধান ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধান সংশােধন পদ্ধতির দিক থেকে দুষ্পরিবর্তনীয়। কেননা, সাধারণ আইন তৈরির পদ্ধতিতে একে সংশােধন করা যাবৈ না। সংশােধন করতে হলে সংসদের দুই-ততীয়াংশ সদস্যের ভােটের প্রয়ােজন হয়। তাছাড়া রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পেশ করলে তিনি সাত দিনের মধ্যে সম্মতি দিবেন নতুবা সাত দিন শেষ হলে সংশােধনীটি আইনে পরিণত হবে। এদিক থেকে সংবিধানটি কিছুটা দুষ্পরিবর্তনীয়।
৪। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রীক গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র।এখানে যুক্ত্রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মত কোনাে অঙ্গরাজ্য বা প্রদেশের ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে। এ কারণে যে, সংবিধান অনুযায়ী সরকারের সকল ক্ষমতা একটিমাত্র সরকারের কাছে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে।এখানে ক্ষমতার কোন সাংবিধানিক বিভাজন করা হয় নি।
৫। সংসদীয় গণতন্ত্র সংবিধানে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলা হয়। এটি মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা নামেও পরিচিত। এতে প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতত্বে গঠিত মন্ত্রিসভা হচ্ছে প্রকৃত শাসক। রাষ্ট্রপতি থাকেন নামসর্বস্ব । এ ব্যবস্থায় পার্লামেন্টের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মন্ত্রিসভার সদস্যগণ যৌথভাবে আইনসভা বা পালামেন্টের নিকট দায়ী থাকেন ।
২। লিখিত দলিল ঃ বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত এবং অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত দলিল। সর্বমােট ৮৩ পৃষ্ঠায় এতে ১১টি ভাগ, ১৫৩ টি অনুচ্ছেদ; ১টি প্রস্তাবনা ও ৪টি তফসিল রয়েছে।সংবিধানে সরকার পরিচালনার সাধারণ নীতিসমূহ সুবিন্যস্তভাবে লিখিত রয়েছে। সরকার ও প্রশাসন সম্পর্কিত বিধিমালা এতে স্থান পেয়েছে। প্রতি ছত্রে এর রয়েছে সৃষ্টিধর্মী সুর।
৩। দম্পরিবর্তনীয় সংবিধান ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধান সংশােধন পদ্ধতির দিক থেকে দুষ্পরিবর্তনীয়। কেননা, সাধারণ আইন তৈরির পদ্ধতিতে একে সংশােধন করা যাবৈ না। সংশােধন করতে হলে সংসদের দুই-ততীয়াংশ সদস্যের ভােটের প্রয়ােজন হয়। তাছাড়া রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পেশ করলে তিনি সাত দিনের মধ্যে সম্মতি দিবেন নতুবা সাত দিন শেষ হলে সংশােধনীটি আইনে পরিণত হবে। এদিক থেকে সংবিধানটি কিছুটা দুষ্পরিবর্তনীয়।
৪। এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি এককেন্দ্রীক গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র।এখানে যুক্ত্রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মত কোনাে অঙ্গরাজ্য বা প্রদেশের ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে। এ কারণে যে, সংবিধান অনুযায়ী সরকারের সকল ক্ষমতা একটিমাত্র সরকারের কাছে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে।এখানে ক্ষমতার কোন সাংবিধানিক বিভাজন করা হয় নি।
৫। সংসদীয় গণতন্ত্র সংবিধানে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলা হয়। এটি মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা নামেও পরিচিত। এতে প্রধানমন্ত্রী ও তার নেতত্বে গঠিত মন্ত্রিসভা হচ্ছে প্রকৃত শাসক। রাষ্ট্রপতি থাকেন নামসর্বস্ব । এ ব্যবস্থায় পার্লামেন্টের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মন্ত্রিসভার সদস্যগণ যৌথভাবে আইনসভা বা পালামেন্টের নিকট দায়ী থাকেন ।
৬। এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা বাংলাদেশে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বিধান করা হয়। এর নাম জাতীয় সংসদ', জনগণের প্রত্যক্ষ ভােটে নির্বাচিত ৩০০ জন সদস্য ও এই সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত ১৫ জন মহিলা সদস্যসহ মােট ৩১৫ জন সদস্য নিয়ে আইনসভা গঠিত ছিল। এ সংবিধানে ১৫টি সংরক্ষিত মহিলা আসন ১০ বছরের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।
৭। প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ সংবিধানের ১নং অনুচ্ছেদের ১নং ধারায় বর্ণিত প্রজাতন্ত্রের প্রস্তাবনা অনুসারে বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত। প্রজাতন্ত্রের প্রস্তাবনায় আরাে বলা হয়েছে স্বাধীনতা ঘােষণার পূর্বে যেসব এলাকা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান গঠিত ছিল স্বাধীনতার পর সেই সব এলাকা নিয়েই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ গঠিত হবে।
৮। গণতন্ত্র ১৯৭২ সালের সংবিধানে গণতন্ত্রের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়, প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে’ (অনুচ্ছেদ-১১)।
৯। সংবিধানের প্রাধান্য : বাংলাদেশ সংবিধানে সংবিধান বা শাসনতন্ত্রের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেননা, সংবিধানকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনের মর্যাদা প্রদান করা হয়। বলা হয় প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। সংবিধান জনগণের পক্ষে কর্তৃত্ব প্রয়ােগ করবে। আবার সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন। অন্য কোন আইন যদি এ সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্য হয় তবে যতখানি অসামঞ্জস্য হবে ততখানি বাতিল বলে গণ্য হবে। সংবিধানের মর্যাদা ও প্রাধান্য রক্ষার দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টের উপর ন্যস্ত করা হয়। কোন আইন সংবিধানের পরিপন্থী হলে তাকে সুপ্রিমকোর্ট বাতিল বলে ঘােষণা করতে পারে। তাছাড়া, যুদ্ধ ঘােষণা বা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সংসদ সদস্যদের সম্মতি প্রয়ােজ্ন।
৮। গণতন্ত্র ১৯৭২ সালের সংবিধানে গণতন্ত্রের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়, প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে’ (অনুচ্ছেদ-১১)।
৯। সংবিধানের প্রাধান্য : বাংলাদেশ সংবিধানে সংবিধান বা শাসনতন্ত্রের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেননা, সংবিধানকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনের মর্যাদা প্রদান করা হয়। বলা হয় প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। সংবিধান জনগণের পক্ষে কর্তৃত্ব প্রয়ােগ করবে। আবার সংবিধানের ৭(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন। অন্য কোন আইন যদি এ সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্য হয় তবে যতখানি অসামঞ্জস্য হবে ততখানি বাতিল বলে গণ্য হবে। সংবিধানের মর্যাদা ও প্রাধান্য রক্ষার দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টের উপর ন্যস্ত করা হয়। কোন আইন সংবিধানের পরিপন্থী হলে তাকে সুপ্রিমকোর্ট বাতিল বলে ঘােষণা করতে পারে। তাছাড়া, যুদ্ধ ঘােষণা বা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সংসদ সদস্যদের সম্মতি প্রয়ােজ্ন।
১০। নাগরিকত্ব ঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৬নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক বাঙালি বলে পরিচিত হবে এবং তাদের এ নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে। অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
১১। মৌলিক অধিকার নাগরিকদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ উন্মুক্ত করার তাগিদে বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৬-৪৭ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মােট ১৮ টি মৌলিক অধিকার সংবিধানের লিপিবদ্ধ করা হয়। সার্বভৌম সংবিধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত এসকল অধিকার হচ্ছে সাম্যের অধিকার, চলাফেরা, সভা-সমিতি, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতি অত্যাবশ্যক ও স্বাভাবিক মানবিক অধিকার। এসব মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কোন আইন পাস করা যাবে না। যদি পাস করা হয় তবে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। এসব মৌলিক অধিকারের অভিভাবক ও সংরক্ষণকারী হলাে সুপ্রীমকোর্ট। অর্থাৎ, এসব মৌলিক অধিকার আদালতের মাধ্যমে বলবৎযােগ্য; তবে জরুরি অবস্থায় বা রাষ্ট্রের কোনাে প্রয়ােজনীয় পরিস্থিতিতে প্রয়ােজনবােধে জাতীয় সংসদ আইনের দ্বারা এ সকল মৌলিক অধিকারের উপর সাময়িকভাবে যুক্তিসঙ্গত বাধা নিষেধ আরোপ করতে পারে।
১২। নামসর্বস্ব রাষ্ট্রপ্রধান ঃ ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হবেন একজন নাম সর্বস্ব বা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি সংসদ সদস্যদের ভােটে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন।
১৩। জনগণের সাবভৌমত্ব সংবিধান অনুসারে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষমতার মালিক হলাে জনগণ (অনুচ্ছেদ-৭)। জনগণের পক্ষে সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ ক্ষমতা প্রয়ােগ করা হয়। অর্থাৎ, জনগণ প্রত্যক্ষভাবে ও প্রতিনিধি প্রেরণের মাধ্যমে পরােক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা রাখে।
১৪। সার্বজনীন ভােটাধিকার বাংলাদেশ সংবিধানের উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হলাে সার্বজনীন ভােটাধিকার। ধর্ম, বর্ণ, শিক্ষা, সম্পত্তি, শ্রেণী নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক ভােটদানের অধিকার পাবেন। বাংলাদেশ সংবিধানে ১৮ বছর বয়স্ক প্রত্যেক নাগরিককে ভােটাধিকার দেয়া হয়েছে।
১৫। ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ১৯৭২ সালের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরােপ করেছে। এ নীতি বাস্তবায়নের জন্য সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ এবং কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার উপর নিপীড়ন বিলােপ করার ব্যবস্থা সংবিধানে করা হয়েছে। তদুপরি এ সংবিধানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাহায্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শােষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে। সংবিধানে আরও বর্ণিত আছে যে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় মালিকানা (State Ownership), সমবায় মালিকানা (Cooperative Ownership) ও ব্যক্তিগত মালিকানা (Private Ownership)-এ তিন প্রকার মালিকানা থাকবে। তবে শেষােক্ত দু'ধরনের মালিকানা থাকবে আইন দ্বারা সীমিত।
১৬। বিচার বিভাগের প্রাধান্য ঃ সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রাধান্য রক্ষা করার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট’ । আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হবে। বিচার বিভাগকে যতদূর সম্ভব স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাখার ব্যবস্থা সংবিধানে গৃহীত হয়েছে। শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা (Independence of Judiciary) এতটুকু ক্ষুন্ন না হয়।
১৭। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ঃ ১৯৭২ সালের সংবিধানের অপর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার বিধানটি। সংবিধান জাতীয় সংসদের দলীয় শৃঙখলা কঠোরভাবে রক্ষা করতে প্রয়াসী হয়। কোন রাজনৈতিক দলের মনােনয়ন লাভ করে এবং তারপর নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে যদি কোন সংসদ সদস্য উক্ত দল ত্যাগ করেন বা দলের বিরুদ্ধে ভােট দেন তাহলে তার জাতীয় সংসদের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। বলাবাহুল্য, এটা ১৯৭২ সালের সংবিধানের একটি অভিনবত্ব (Novelty of the Constitution)।
১৮। প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল সাধারণ বিচার বিভাগ ছাড়াও বাংলাদেশ সংবিধানে প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের বিধান রয়েছে। সংবিধানের ১১৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের কর্মের শর্তাবলি, নিয়ােগ, বদলি, বরখাস্ত, পদোন্নতি, দণ্ড ও কর্মের মেয়াদ, রাষ্ট্রের উদ্যোগ ও সম্পত্তি পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়সমূহের উপর প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের এখতিয়ার থাকবে । প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের উপর সুপ্রীমকোর্টকে কোন নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা দেয়া হয় নি। আপীলের বিধানও করা হয়নি। সুতরাং ১১৭নং অনুচ্ছেদ সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতার উপর নিয়ন্ত্রণ আরােপ করা হয়। ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের বিধান নেই।
১৯। ন্যায়পাল বাংলাদেশ সংবিধানের ৭৭নং অনুচ্ছেদে ন্যায়পালের (Ombudsman) বিধান রয়েছে। সংবিধানের উক্ত অনুচ্ছেদে বলা হয় সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালের পদ প্রতিষ্ঠার জন্য বিধান করতে পারবেন এবং তাকে যে কোন মন্ত্রনালয়, সরকারি কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের যে কোনাে কার্য সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতাসহ অন্যান্য ক্ষমতা ও দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ন্যায়পাল তার দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বাৎসরিক রিপাের্ট প্রণয়ন করবেন এবং অনুরুপ রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপিত করবেন।
বাংলাদেশে ন্যায়পাল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। কিন্তু তিনি শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করবেন। তিনি আইনসভার নিকট দায়ী এবং কেবলমাত্র আইনসভার উপদেশ বা আবেদনক্রমে তাকে অপসারণ করা যাবে । তার প্রধান কর্তব্য শাসন বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযােগ শ্রবণ করা। আইনসভার সদস্য বা যে কোনাে ব্যক্তি বা কোনাে প্রতিষ্ঠান অনুরূপ অভিযােগ উত্থাপন করতে পারবেন। ন্যায়পাল অভিযােগ সম্পর্কে তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য কোনাে মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মচারী বা কর্তৃপক্ষের কার্য তদন্ত করবেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণাদি গ্রহণ করবেন। | সরকারি যে কোনাে ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের কাজের নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তথা তাদের জবাবদিহিতা অধিকতর নিশ্চিতকরণকল্পে ন্যায়পালের ভূমিকা গণতান্ত্রিক সফলতায় অসীম। কিন্তু বিধান থাকলেও আজ পর্যন্ত ন্যায়পাল পদটি কার্যকর করা হয় নি।
২০। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে (অনুচ্ছেদ ৮ - ২৫) রাষ্ট্র পরিচালনার কিছু মূলনীতি লিপিবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি। এ সম্বন্ধে সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়, “যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তির জন্য যুদ্ধে আত্মনিয়ােগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণােত্সর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে।”
১১। সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সংবিধানের আওতায় প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিগণ স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন। সংবিধানে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।
২২। জরুরি অবস্থা ঘােষণার বিধান ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধানের একটি বিশষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে জরুরী অবস্থা ঘােষণার কোনাে বিধান ছিল না। পরবর্তীকালে তা অন্তর্ভুক্ত হয়।
১২। নামসর্বস্ব রাষ্ট্রপ্রধান ঃ ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হবেন একজন নাম সর্বস্ব বা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি সংসদ সদস্যদের ভােটে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন।
১৩। জনগণের সাবভৌমত্ব সংবিধান অনুসারে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষমতার মালিক হলাে জনগণ (অনুচ্ছেদ-৭)। জনগণের পক্ষে সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এ ক্ষমতা প্রয়ােগ করা হয়। অর্থাৎ, জনগণ প্রত্যক্ষভাবে ও প্রতিনিধি প্রেরণের মাধ্যমে পরােক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা রাখে।
১৪। সার্বজনীন ভােটাধিকার বাংলাদেশ সংবিধানের উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হলাে সার্বজনীন ভােটাধিকার। ধর্ম, বর্ণ, শিক্ষা, সম্পত্তি, শ্রেণী নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক ভােটদানের অধিকার পাবেন। বাংলাদেশ সংবিধানে ১৮ বছর বয়স্ক প্রত্যেক নাগরিককে ভােটাধিকার দেয়া হয়েছে।
১৫। ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা ১৯৭২ সালের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরােপ করেছে। এ নীতি বাস্তবায়নের জন্য সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ এবং কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার উপর নিপীড়ন বিলােপ করার ব্যবস্থা সংবিধানে করা হয়েছে। তদুপরি এ সংবিধানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক শক্তির সাহায্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শােষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়েছে। সংবিধানে আরও বর্ণিত আছে যে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় মালিকানা (State Ownership), সমবায় মালিকানা (Cooperative Ownership) ও ব্যক্তিগত মালিকানা (Private Ownership)-এ তিন প্রকার মালিকানা থাকবে। তবে শেষােক্ত দু'ধরনের মালিকানা থাকবে আইন দ্বারা সীমিত।
১৬। বিচার বিভাগের প্রাধান্য ঃ সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রাধান্য রক্ষা করার উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট’ । আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট গঠিত হবে। বিচার বিভাগকে যতদূর সম্ভব স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাখার ব্যবস্থা সংবিধানে গৃহীত হয়েছে। শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা (Independence of Judiciary) এতটুকু ক্ষুন্ন না হয়।
১৭। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ঃ ১৯৭২ সালের সংবিধানের অপর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার বিধানটি। সংবিধান জাতীয় সংসদের দলীয় শৃঙখলা কঠোরভাবে রক্ষা করতে প্রয়াসী হয়। কোন রাজনৈতিক দলের মনােনয়ন লাভ করে এবং তারপর নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে যদি কোন সংসদ সদস্য উক্ত দল ত্যাগ করেন বা দলের বিরুদ্ধে ভােট দেন তাহলে তার জাতীয় সংসদের সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। বলাবাহুল্য, এটা ১৯৭২ সালের সংবিধানের একটি অভিনবত্ব (Novelty of the Constitution)।
১৮। প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল সাধারণ বিচার বিভাগ ছাড়াও বাংলাদেশ সংবিধানে প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের বিধান রয়েছে। সংবিধানের ১১৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের কর্মের শর্তাবলি, নিয়ােগ, বদলি, বরখাস্ত, পদোন্নতি, দণ্ড ও কর্মের মেয়াদ, রাষ্ট্রের উদ্যোগ ও সম্পত্তি পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়সমূহের উপর প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের এখতিয়ার থাকবে । প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের উপর সুপ্রীমকোর্টকে কোন নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা দেয়া হয় নি। আপীলের বিধানও করা হয়নি। সুতরাং ১১৭নং অনুচ্ছেদ সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতার উপর নিয়ন্ত্রণ আরােপ করা হয়। ভারত বা যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের প্রশাসনিক ট্রাইবুনালের বিধান নেই।
১৯। ন্যায়পাল বাংলাদেশ সংবিধানের ৭৭নং অনুচ্ছেদে ন্যায়পালের (Ombudsman) বিধান রয়েছে। সংবিধানের উক্ত অনুচ্ছেদে বলা হয় সংসদ আইনের দ্বারা ন্যায়পালের পদ প্রতিষ্ঠার জন্য বিধান করতে পারবেন এবং তাকে যে কোন মন্ত্রনালয়, সরকারি কর্মচারী বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের যে কোনাে কার্য সম্পর্কে তদন্ত পরিচালনার ক্ষমতাসহ অন্যান্য ক্ষমতা ও দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ন্যায়পাল তার দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বাৎসরিক রিপাের্ট প্রণয়ন করবেন এবং অনুরুপ রিপোর্ট সংসদে উপস্থাপিত করবেন।
বাংলাদেশে ন্যায়পাল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। কিন্তু তিনি শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করবেন। তিনি আইনসভার নিকট দায়ী এবং কেবলমাত্র আইনসভার উপদেশ বা আবেদনক্রমে তাকে অপসারণ করা যাবে । তার প্রধান কর্তব্য শাসন বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযােগ শ্রবণ করা। আইনসভার সদস্য বা যে কোনাে ব্যক্তি বা কোনাে প্রতিষ্ঠান অনুরূপ অভিযােগ উত্থাপন করতে পারবেন। ন্যায়পাল অভিযােগ সম্পর্কে তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য কোনাে মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্মচারী বা কর্তৃপক্ষের কার্য তদন্ত করবেন এবং সাক্ষ্য প্রমাণাদি গ্রহণ করবেন। | সরকারি যে কোনাে ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের কাজের নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তথা তাদের জবাবদিহিতা অধিকতর নিশ্চিতকরণকল্পে ন্যায়পালের ভূমিকা গণতান্ত্রিক সফলতায় অসীম। কিন্তু বিধান থাকলেও আজ পর্যন্ত ন্যায়পাল পদটি কার্যকর করা হয় নি।
২০। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে (অনুচ্ছেদ ৮ - ২৫) রাষ্ট্র পরিচালনার কিছু মূলনীতি লিপিবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি। এ সম্বন্ধে সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়, “যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তির জন্য যুদ্ধে আত্মনিয়ােগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণােত্সর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে।”
১১। সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সংবিধানের আওতায় প্রধান বিচারপতি ও অন্য বিচারপতিগণ স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন। সংবিধানে এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে।
২২। জরুরি অবস্থা ঘােষণার বিধান ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ সংবিধানের একটি বিশষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে জরুরী অবস্থা ঘােষণার কোনাে বিধান ছিল না। পরবর্তীকালে তা অন্তর্ভুক্ত হয়।
২৩। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ঃ ১৯৭২ সালের সংবিধানের একটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হলাে, সংসদীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার।
২৪। মানবাধিকার সমুন্নত রাখা সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি' অংশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।
২৫। প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির ব্যবস্থা সংবিধানের ১১নং অনুচ্ছেদে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে। নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
২৬। অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশ সংবিধানের একটি উল্লেখযােগ্য দিক হচ্ছে, একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ঘােষণা (অনুচ্ছেদ ১৭)।
২৭। নির্বাচন কমিশন ও কর্মকমিশন গঠন স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধানে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন এবং সরকারি চাকরিতে লােক নিয়ােগের জন্য কর্মকমিশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
২৮। ইংরেজি পাঠের প্রাধান্য ঃ বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে ইংরেজি ও বাংলা পাঠের মধ্যে কোনাে বিরােধ বা পার্থক্য দেখা দিলে ইংরেজি পাঠ বলবৎ থাকবে।
২৯। মহিল নাগরিকদের অবস্থান বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয় জীবনের সর্বত্র মহিলা নাগরিকদের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা বিধানের ব্যবস্থা রয়েছে। সংবিধানের ২৮(১) ধারায় বলা হয়েছে কেবল ধর্ম, গােষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনাে নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন কৰে না'। ২৮(২) ধারায় বলা হয়েছে রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে । ৬৫(৩) ধারায় নারীর জন্য জাতীয় সংসদে আসন সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এ ধারার অধীনে স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।
৩০। মালিকানার নীতি বাংলাদেশের সংবিধানে তিন ধরনের মালিকানার নীতির কথা বলা হয়েছে। যথা রাষ্ট্রীয়, সমবায় ও ব্যক্তিগত। সমবায় ও ব্যক্তিগত মালিকানা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকবে।
১৯৭২ সালের সংবিধানের দিকে দৃষ্টিপাত করলে এটা সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, সংবিধানটি একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান। এ সংবিধানের মাধ্যমেই বাংলাদেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থার গােড়াপত্তন ঘটে। পাশাপাশি গােড়াপত্তন ঘটে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতান্ত্রিক বিধি-বিধানের । এদিক থেকে বিচার করলে বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানকে একটি প্রগতিশীল (Progressive) সংবিধান বলে অভিহিত করা চলে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে কতিপয় যুক্তিসঙ্গত সমালােচনা উত্থাপন করা হয়েছে। অভিযােগ করা হয়েছে যে, সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ ‘গণস্বার্থ’ ও ‘জাতীয় নিরাপত্তার নামে সীমিত করা হয়েছে। কাজেই সংবিধানটিকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পরিপন্থী বলে কেউ কেউ বর্ণনা করেন।৪৩
সংবিধানে উল্লিখিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিগুলাে-গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র যে এর উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এ নীতিগুলাের কোন আইনগত মর্যাদা দেয়া হয়নি। এগুলাের আদালতে কার্যকরী করার কোনরূপ নিশ্চয়তাও সংবিধানে বর্ণিত হয়নি। বদরুদ্দীন উমর (Badruddin Umar) অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, সংবিধানে উল্লিখিত মৌল নীতিগুলাে নিতান্তই অপর্যাপ্ত। তিনি সংবিধানকে ‘সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে একটি মৌলিক পদক্ষেপ' বলে চিত্রিত করেছেন ৪৪ উপরন্তু তিনি সংসদীয় প্রাধান্য, দলীয় শৃঙ্খলা, জরুরি বিধি-বিধান প্রভৃতি সমালােচনা করে বলেন যে, এগুলাে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দেশে ‘একনায়কতন্ত্র কায়েম করারই শামিল।৪৫ আসল সংবিধানের চারটি মূলনীতিকে সর্বৈব বৈধ বলে গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সংবিধানে সেগুলােকে বাস্তবায়িত করার তেমন। কোন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। তদুপরি, এ সংবিধানের মাধ্যমে বাংলাদেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে এত ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে যার ফলে তিনি কার্যত একনায়কে পরিণত হয়েছেন।
২৪। মানবাধিকার সমুন্নত রাখা সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি' অংশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।
২৫। প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির ব্যবস্থা সংবিধানের ১১নং অনুচ্ছেদে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে। নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
২৬। অভিন্ন শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশ সংবিধানের একটি উল্লেখযােগ্য দিক হচ্ছে, একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ঘােষণা (অনুচ্ছেদ ১৭)।
২৭। নির্বাচন কমিশন ও কর্মকমিশন গঠন স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের সংবিধানে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন এবং সরকারি চাকরিতে লােক নিয়ােগের জন্য কর্মকমিশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
২৮। ইংরেজি পাঠের প্রাধান্য ঃ বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে ইংরেজি ও বাংলা পাঠের মধ্যে কোনাে বিরােধ বা পার্থক্য দেখা দিলে ইংরেজি পাঠ বলবৎ থাকবে।
২৯। মহিল নাগরিকদের অবস্থান বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয় জীবনের সর্বত্র মহিলা নাগরিকদের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা বিধানের ব্যবস্থা রয়েছে। সংবিধানের ২৮(১) ধারায় বলা হয়েছে কেবল ধর্ম, গােষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনাে নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন কৰে না'। ২৮(২) ধারায় বলা হয়েছে রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে । ৬৫(৩) ধারায় নারীর জন্য জাতীয় সংসদে আসন সংরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এ ধারার অধীনে স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।
৩০। মালিকানার নীতি বাংলাদেশের সংবিধানে তিন ধরনের মালিকানার নীতির কথা বলা হয়েছে। যথা রাষ্ট্রীয়, সমবায় ও ব্যক্তিগত। সমবায় ও ব্যক্তিগত মালিকানা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকবে।
১৯৭২ সালের সংবিধানের দিকে দৃষ্টিপাত করলে এটা সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, সংবিধানটি একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান। এ সংবিধানের মাধ্যমেই বাংলাদেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থার গােড়াপত্তন ঘটে। পাশাপাশি গােড়াপত্তন ঘটে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতান্ত্রিক বিধি-বিধানের । এদিক থেকে বিচার করলে বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানকে একটি প্রগতিশীল (Progressive) সংবিধান বলে অভিহিত করা চলে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে কতিপয় যুক্তিসঙ্গত সমালােচনা উত্থাপন করা হয়েছে। অভিযােগ করা হয়েছে যে, সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ ‘গণস্বার্থ’ ও ‘জাতীয় নিরাপত্তার নামে সীমিত করা হয়েছে। কাজেই সংবিধানটিকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পরিপন্থী বলে কেউ কেউ বর্ণনা করেন।৪৩
সংবিধানে উল্লিখিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিগুলাে-গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র যে এর উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এ নীতিগুলাের কোন আইনগত মর্যাদা দেয়া হয়নি। এগুলাের আদালতে কার্যকরী করার কোনরূপ নিশ্চয়তাও সংবিধানে বর্ণিত হয়নি। বদরুদ্দীন উমর (Badruddin Umar) অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, সংবিধানে উল্লিখিত মৌল নীতিগুলাে নিতান্তই অপর্যাপ্ত। তিনি সংবিধানকে ‘সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে একটি মৌলিক পদক্ষেপ' বলে চিত্রিত করেছেন ৪৪ উপরন্তু তিনি সংসদীয় প্রাধান্য, দলীয় শৃঙ্খলা, জরুরি বিধি-বিধান প্রভৃতি সমালােচনা করে বলেন যে, এগুলাে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক দেশে ‘একনায়কতন্ত্র কায়েম করারই শামিল।৪৫ আসল সংবিধানের চারটি মূলনীতিকে সর্বৈব বৈধ বলে গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সংবিধানে সেগুলােকে বাস্তবায়িত করার তেমন। কোন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। তদুপরি, এ সংবিধানের মাধ্যমে বাংলাদেশে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে এত ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে যার ফলে তিনি কার্যত একনায়কে পরিণত হয়েছেন।
0 Comments