Hot Posts

6/recent/ticker-posts

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট আলেচনা কর

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট
মার্কিন সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য প্রতিটি সংবিধানের কতিপয় বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। মার্কিন সংবিধানের ক্ষেত্রে তা প্রযােজ্য। ঐ সকল বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই সংবিধানের সামগ্রিক পরিচয় নিহিত থাকে। মার্কিন সংবিধানের প্রধান  বৈশিষ্ট্যগুলােকে নিম্নে তুলে ধরা হলঃ 

১, প্রস্তাবনাঃ প্রস্তাবনাকে মার্কিন সংবিধানের প্রথম বৈশিষ্ট্য বলা যায়। ১৭৮৭ সালে ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে রচিত ও গৃহীত মার্কিন সংবিধানে সর্বপ্রথম একটি প্রস্তাবনার কথা উল্লেখ করা হয়। এর পূর্বে সংবিধানে প্রস্তাবনা সংযােজনের কোন দৃষ্টান্ত নেই। স্বাধীনতা ঘােষণার মৌলিক বিধানগুলােও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণেতাগণ এ প্রস্তাবনাকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন। 

২. লিখিত সংবিধানঃ মার্কিন সংবিধান লিখিত প্রকতির। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম লিখিত সংবিধান। এ সংবিধানের অধিকাংশ বিধি বিধান লিখিত। এ সংবিধান সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পন্ন। সংবিধানের ৬নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, This constitution and the laws of the United States shall be the supreme law of the land." 

৩, জনগণের সার্বভৌমত্বঃ জনগণের সার্বভৌমত্ব মার্কিন শাসনতন্ত্রের একটি বিশিষ্ট দিক। মার্কিন সংবিধানের শুরুতে বলা আছে—“We are the people of the United States" সংবিধানের প্রস্তাবনার ঐ ধরনের উল্লেখ গণসার্বভৌমত্যের নিদর্শন। এ প্রসঙ্গে টকভিল বলেন, “মূর্তি পূজারীর কাছে ক্মিহের স্থান যে রকম, মার্কিন শাসন ব্যবস্থায় জনগণের স্থান ও তদ্রুপ”। 

৪. সংক্ষিপ্ততাঃ সংক্ষিপ্ততা মার্কিন সংবিধানের একটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য। মার্কিন সংবিধানে কেবলমাত্র শাসন ব্যবস্থার মৌল বিষয়গুলাে উল্লেখ রয়েছে। এ সংবিধানে ব্যাপক কোন ব্যাখ্যা নেই। এর কারণ হল অঙ্গরাজ্যগুলাের স্ব-স্ব সংবিধান। সংবিধানটির প্রাথমিক মুদ্রিত আয়তন ১০-১২ পৃষ্ঠার বেশী ছিল না। সুতরাং এটি একটি সংক্ষিপ্ত সংবিধান।

৫. যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাঃ মার্কিন সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির। এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রকৃষ্ট উদাহরণ যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা মানে, সংবিধান অনুসারে কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যের মধ্য ক্ষমতার বন্টন। মার্কিন সংবিধান ছিল পৃথিবীর সকল যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের মধ্যমণি।

৬. সংবিধানের প্রধান্যঃ মার্কিন সংবিধানে সংবিধানের প্রাধান্যের কথা বলা আছে। সংবিধানের প্রধান্য বলতে আমরা বুঝি সংবিধান কর্তৃক গঠিত সকল সংস্থা ও কাঠামাে সংবিধানের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়াকে। বস্তুতঃ সংবিধান হল দেশের মৌলিক ও সর্বোচ্চ আইন।

৭. পরিবর্তনীয় সংবিধানঃ এ সংবিধান লিখিত প্রকৃতির এবং দুষ্পরিবর্তনীয়। এ সংবিধান সহজে পরিবর্তনযােগ্য নয়। মার্কিন সংবিধান পরিবর্তনে বিশেষ জটিল ব্যবস্থার প্রয়ােজন পড়ে। এ কারণে মার্কিন সংবিধান দুস্পরিবর্তনীয় প্রকৃতির। 

৮. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণঃ মার্কিন সংবিধানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ। এই বৈশিষ্ট্যকে কেউ কেউ মার্কিন সংবিধানের অন্যতম স্তম্ভ বলে অভিহিত করেছেন। এ নীতি অনুসারে সরকারের ত্রিবিধ ক্ষমতা- আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। বিধান রাখা হয়েছে যে, সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না। 

৯, নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য-নীতিঃ মার্কিন সংবিধানে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য- নীতির ব্যবস্থা রয়েছে। এটি মার্কিন সংবিধানের একটি উল্লেখযােগ্য দিক। সংবিধান প্রনেতাগণ স্বেচছাচারের আশংঙ্কা দূর করার জন্য বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য নীতি সংযােজন করেন। এ নীতির মূল কথা হল- প্রত্যেক বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অপর দুই বিভাগ প্রাপ্ত। 

১০, মৌলিক অধিকার: মার্কিন সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের বিধান রয়েছে। নাগরিকের  মৌলিক অধিকার লিখিত ভাবে মার্কিন সংবিধানে সর্ব প্রথম উল্লেখ করা হয়। সংবিধানের প্রথম ১০টি অনুচ্ছেদের মাধ্যমে নাগরিক অধিকারগুলাে সন্নিবেশিত হয়েছে। 

১১. রাষ্ট্রপতিঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বিদ্যমান। এ ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত রাষ্ট্রপতি আইনগত ও বাস্তব দিক থেকে সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান। রাষ্ট্রপতি জনগণের সরাসরি ভােটে নির্বাচিত হন। নির্বাচনী কলেজের মাধ্যমে সংবিধানের ২নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি শাসন বিভাগের যাবতীয় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি কংগ্রেসের কাছে সরাসরি দায়িত্বশীল নন। মন্ত্রীগণ আইন সভার কাছে দায়ী থাকে এবং সরাসরি প্রেসিডেন্টের কাছে দায়ী থাকেন। তারা আইন সভার সদস্যও নন।

১২, বিচার বিভাগীয় পর্যালােচনাঃ বিচার বিভাগীয় পর্যালােচনা মার্কিন সংবিধানের একটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য। যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতি সফলতার জন্য এ ব্যবস্থা অপরিহার্য। বিচার বিভাগীয় পর্যালােচনা হল আদালতের আইন সভার কোন আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করার এখতিয়ার। এ প্রক্রিয়ায় আদালত সংবিধানের রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করে। নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির এটি একটি প্রকৃত উদাহরণ। 

১৩, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাঃ মার্কিন শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক প্রকৃতির। এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। মার্কিন সংবিধানের প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ গণতন্ত্রের সহাবস্থানের বিধান রাখা হয়েছে। এ শাসনতন্ত্রে “গণ-উদ্যোগ ও “গণ ভােট" এর উল্লেখ রয়েছে। মার্কিন সংবিধানে এটিই হলাে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ গণতন্ত্রের পরিচয়। 

১৪. দ্বৈত ব্যবস্থাঃ দ্বি-ব্যবস্থা মার্কিন সংবিধানের সর্বশেষ বৈশিষ্ট্য রূপে উল্লেখ করা যায়। মার্কিন সংবিধানে দ্বি-নাগরিকত্বের পাশাপাশি দ্বি-কক্ষ আইন সভা ও দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। এ ব্যবস্থায় নাগরিক একাধারে যুক্তরাষ্ট্র ও অংগ রাষ্ট্রের নাগরিক বলে বিবেচিত হয়।

Post a Comment

0 Comments