Hot Posts

6/recent/ticker-posts

শের-ই বাংলাকে কৃষক-প্রজার মুক্তির অগ্রদূত বলা হয় কেন?

কৃষক-প্রজার মুক্তি দূত:

শের-ই বাংলাকে কৃষক-প্রজার মুক্তির অগ্রদূত বলা হয় কেন?
ফজলুল হক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক শাসক ও শােষকগােষ্ঠী ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধের পর তাদের শাসন ও শােষণ ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করার জন্য জমিদার, মজুতদার ও মহাজন শ্রেণীর সৃষ্টি করে। ফলে | এই জমিদার ও মহাজন শ্রেণীই ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের শক্তির প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়ায় এবং প্রায় দু'শ' বছরকাল অত্যাচারী জমিদারের সহায়তায় ব্রিটিশ শােষকগােষ্ঠী এ দেশের সাধারণ কৃষক প্রজাদের উপর নির্মম অত্যাচার ও শােষণের ষ্টিম রােলার চালায়। ব্রিটিশ শােষকগােষ্ঠীর প্রতিনিধি তক্কালীন বড়লাট লর্ড কর্ণওয়ালিশ ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তন করেন। এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের নামে তহশীলদারগণ জমিদারশ্রেণীতে উত্তীর্ন হয়। জমিদারগণ ইচ্ছে মত খাজনা নির্ধারণ এবং আদায়ের সুযােগ পায়। চিরস্থায়ী ব্যবস্থা অনুযায়ী জমিদার প্রজার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা খাজনা আদায় করতে পারত এবং ঔপনিবেশিক সরকারকে | দিতাে মাত্র তিন কোটি টাকা। কিন্তু জমিদার দ্বারা প্রজাপীড়ন রােধ করবার আইনগত কোন ব্যবস্থা না থাকায় জমিদার হয়ে ওঠেন একজন প্রভাবশালী রাজা। এই টাকা আদায় করার জন্য জমিদারগণ  কৃষক-প্রজা পীড়ন, অনাচার ও অত্যাচারের পথ বেছে নিয়েছিলাে। এরূপ অত্যাচার চলতে থাকে প্রায় দু’শত বছর যাবৎ। শাসন, শােষণ, অত্যাচার ও উৎপীড়নে জর্জরিত অবিভক্ত বাংলায় ব্রিটিশ সৃষ্ট জমিদার, মহাজন, রাজা মহারাজাদের প্রতাপ প্রতিপত্তির সীমা ছাড়িয়ে যায়। শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই জমিদার ও মহাজন শ্রেণীর বিরুদ্ধে প্রথম সংগ্রামের সূচনা করেন। তারই নির্দেশে খােশ মােহাম্মদ চৌধুরী ময়মনসিংহের জামালপুর মহকুমার কুমারচরে এক বিরাট কৃষক-প্রজা সাধারণের সম্মেলনের আয়ােজন করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষক প্রজাদের অকৃত্রিম বন্ধু শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হক নিজে। সভাপতির ভাষণে তিনি কৃষক-প্রজাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। তার আহবানে সাড়া দিয়ে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল কৃষক প্রজাসাধারণ একতাবদ্ধ হয়। তখন থেকে মেহনতী জনগণের মধ্যে জাগরণের সাড়া পরিলক্ষিত হয়। এই আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যে বরিশাল, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, ঢাকা, কুমিল্লা এবং কুষ্টিয়াসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শেরে বাংলার নেতৃত্বে অপ্রতিরােধ্য আন্দোলন গড়ে উঠে এবং এ সময় তারই নেতৃত্বে নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতির Jজন্ম হয়। এই সমিতিই জমিদার ও মহাজন শ্রেণীর বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা করে।



এই সময় শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হকের নেতৃত্বে কুষক-প্রজাদের দেয় ঋণ সম্পর্কে জরিপ করা হয়। এতে দেখা যায়, জমিদাররা কৃষক-প্রজাদের কাছ থেকে তেষট্টি কোটি টাকা আদায় করতাে। সরকারীভাবে আদায় দেখাতাে মাত্র আঠারাে কোটি টাকা এবং ব্রিটিশ সরকারকে তারা খাজনা হিসেবে | দিতাে মােট ছয় কোটি টাকা। তেষট্টি কোটি টাকা থেকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে বাকী সাতান্ন কোটি টাকা জমিদার ও মহাজনরা আত্বসাৎ করতাে। উপরােক্ত টাকা কৃষক-প্রজা সাধারণের উপর নির্মম অত্যাচার চালিয়ে আদায় করা হতাে। শেরে বাংলার নেতৃত্বে পরিচালিত নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতির উপরােক্ত জরিপে আরাে দেখা যায় কৃষকপ্রজাদের ঋণের পরিমাণ চারশত কোটি টাকা। এই ঋণ চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের পরিমাণ দাঁড়ায় চারপাঁচগুণ। কৃষক-প্রজা সাধারণের উপর শােষণ-অত্যাচারের বিরুদ্ধে শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হকের নেতৃত্বে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে বরিশালের গৌরনদীর আগৈলঝরাতে এক বিরাট কৃষক-প্রজা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই ভাবে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক-প্রজা সম্মেলন করে কৃষকদের মুক্তির পথ প্রসারিত করেছিলেন।


শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হক ১৯৪০ খৃষ্টাব্দে মহাজনী আইন পাস করে বাংলার কৃষক-প্রজাদেরকে মহাজনদের অত্যাচার, অনাচার এবং শােষণের রাহুমুক্ত করেন। কৃষককুলের মুক্তিদূত শেরে বাংলার নির্দেশেই ৬০ হাজার ঋণসালিশী বাের্ড স্থাপিত হয়। সারা দেশের জমিদার-মহাজন শ্রেণী উপরােক্ত আইনের বিরােধিতা করলেও শেরে বাংলার অনমনীয় দৃঢ়তা এবং সহকর্মীদের প্রচেষ্টায় প্রতিক্রিয়াশীলদের চক্রান্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। একই বছর শেরে বাংলা প্রজাস্বত্ব আইন পাস করে জমির উপর কৃষকদের মালিকানা কায়েম করেন। ফলে কৃষকদের মুক্তিদূত শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হকের সুমহান নেতৃত্বে কৃষককুল তাদের হারানাে জমি ফিরে পায়। কৃষকদের ওপর শাসন, | শােষণ ও নির্যাতন চিরতরে অবসান ঘটে।

Post a Comment

0 Comments