ধর্মীয় বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রায়শই মানবজীবনের যাবতীয় সমস্যাসহ অন্য ব্যক্তির সাথে পরস্পর বিপরীতমুখী চন্তা ভাবনাকে চিহ্নিত ও পরিচিত ঘটানাের সুযােগ বা ক্ষেত্র তৈরি করা হয়। কেউ শান্তি প্রত্যাশা করলে তাকে মানব পরিবেশ, প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধা থাকতে হবে। কেননা, শান্তি ও স্রষ্টার সৃষ্টির মাঝে সম্পর্ক রয়েছে। ইহুদি ও খ্রিস্টানগণ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন যে, একমাত্র ঈশ্বরের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সান্নিধ্য স্থাপনের মধ্যেই প্রকৃত শান্তি নাহত। খ্রিস্টানরা দাবি দরেন যে, যিশুখ্রিস্ট পৃথিবীতে ‘ঈশ্বরের শান্তির রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন, যেখানে ব্যক্তি, সামজ ও সকল সৃষ্টি শয়তানের আতওতামুক্ত থাকবে। এই ঈশ্বরের রাজ্যে মানুষ প্রবেশ করবে এবং শান্তিতে বসবাস করবে। এই শান্তির রাজ্যে যিশুখ্রিস্টের সাথে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি হবে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে যে, কেবলমাত্র সকল প্রকার কষ্ট, দুঃখদুর্দশা শেষে শান্তি লাভ করা সম্ভব। সকল ধরনের কষ্টকে তারা শান্তি লাভের অন্যতম উপায় হিসেবে মনে করে। বৌদ্ধ দার্শনিক মতবাদ চার মহৎ সত্য বা গুণাবলি’র উপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে এ ধর্মের অনুসারীদের চার মহৎ গুণাবলির দর্শন ধারণের শিক্ষা গ্রহণের কথা বলা। হয়েছে। এই চার মহান সত্য বা গুণ হচ্ছে : ১. দুঃখের প্রকৃতি, ২. দুঃখের উৎপত্তি বা কারণ, ৩. দুঃখের সমাপ্তি বা বিরতি এবং ৪. দুঃখ থেকে মুক্তির পথ বা উপায়।
বৌদ্ধধর্ম দর্শন অনুযায়ী দুঃখের প্রকৃতি, কারণ ও এর সমাপ্তি সম্পর্কে যদি জ্ঞান লাভ করা যায় তবেই এ থেকে মুক্তি লাভের উপায়ও জানা যাবে। আর দুঃখ থেকে মুক্তি আসলেই শান্তি অর্জন সম্ভব। “দুঃখ থেকে পরিত্রাণ লাভ কর ও শান্তি লাভ কর”-এটি বৌদ্ধদের দার্শনিক মতবাদের চারটি মহৎ গুণাবলির অন্যতম একটি হিসেবে স্বীকৃত।
ইসলামে শান্তির ধারণা একটি মৌলিক বিষয়। ইসলামের মূলভিত্তি গড়ে উঠছে শান্তির উপর ভিত্তি করে। তবে ইসলামে শান্তির প্রসঙ্গ আসলেই ব্যক্তির মনের প্রশান্তির বিষয়টি মুখ্য হয়ে উঠে। কেননা ব্যক্তির মনে শান্তি স্থাপিত হলেই কেবল পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি স্থাপিত হতে পারে। ব্যক্তির জীবন থেকে শুরু করে বিশ্ব শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম কাজ করে। ইসলাম বিশ্বাস করে যে, শুধুমাত্র ইসলামী আদর্শ ও নীতিমালা বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়েই সকল ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। ইসলাম হচ্ছে শান্তির বাহক, শান্তিই ইসলামের মূল লক্ষ্য। মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বশেষ নবী হযরত মুহম্মদ (স) এর মাধ্যমে মানবজাতির নিকট শান্তির বার্তা পৌঁছে দেন। তাই রাসূল (স) হচ্ছে বিশ্ব শান্তির দূত।
রাসূল (স) ঘােষণা দেন, “সেই প্রকৃত মুসলমান, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান হেফাজত থাকে। কাজেই বলা যায়, ইসলাম মানে শান্তি ও সমর্পণ। এটি আল্লাহর নিকট নিজেকে সমর্পণ করাকে বুঝায়। ইসলাম শান্তির ধারণা সৃষ্টিকর্তার প্রতি আত্মসমর্পণের মধ্যে নিহিত। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার নিকট আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তার সকল বিধানকে পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে মেনে বক্তিগত, সমষ্টিগত, রাষ্ট্রীয়, বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন করা। পবিত্র আল কুরআনে বলা হয়েছে, “তােমরা সমগ্র বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কর, পরকালে তােমাদের শান্তিময় অনন্ত জীবন দেয়া হবে।”
0 Comments