Hot Posts

6/recent/ticker-posts

রাজনীতি অধ্যয়নে গতানুগতিক পদ্ধতি ও আধুনিক পদ্ধতির পার্থক্য

গতানুগতিক ও আধুনিক পদ্ধতির পার্থক্য : 
রাজনীতি বিশ্লেষণে গতানুগতিক ও আধুনিক পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য আলােচনা করা হলাে : 
 ১, রাজনীতির সংজ্ঞা ও প্রকৃতিগত পার্থক্য : গতানুগতিক পদ্ধতির অনুসারিগণ রাজনীতির সংজ্ঞা ও প্রকৃতি নির্ধারণ করেছেন রাষ্ট্র, সরকার ও সার্বভৌমত্ব ইত্যাদির নিরিখে । তাদের সংজ্ঞা ছিল খুবই সংকীর্ণ। অন্যদিকে, আধুনিক পদ্ধতির অনুসারিগণ রাজনৈতিক ক্ষমতা, কর্তত্ব, প্রভাব এবং বিরোধের প্রেক্ষাপটে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়াস করেছেন। আধুনিক সংজ্ঞায় রাজনীতির পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। সুতরাং রাজনীতির সংজ্ঞা ও প্রকৃতিগত দিক থেকে উভয় পদ্ধতির মধ্যে 'পার্থক্য লক্ষণীয়।

২, উদ্দেশাগত পার্থক্যঃ গতানুগতিক পদ্ধতির উদ্দেশ্য ছিল আদর্শ রাজনৈতিক জীবনের অনুসন্ধান করা। কোনটি মহৎ এবং আদর্শরূপ তাই তখন অনুসন্ধান করা হতাে। কিন্তু আধুনিক পদ্ধতির লক্ষ্য হলাে বাস্তবভিত্তিক ঘটনার উপস্থাপন। এখানে অভিজ্ঞতালব্ধ ও প্রয়োগযোগ্য তত্ত্ব গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক অনুসন্ধান কার্য পরিচালিত হয়।

৩. পদ্ধতিগত পার্থক্য : গতানুগতিক অধ্যয়ন পদ্ধতির ক্ষেত্রে পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হতাে দার্শনিক, ঐতিহাসিক, অবরােহমূলক, তুলনামূলক ইত্যাদি। অন্যদিকে, আধুনিক পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণমূলক, পরীক্ষণমূলক এবং পরিসংখ্যানমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আধুনিক অধ্যয়ন পদ্ধতিতে বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল ব্যবহারের উপর গুরুত্বারােপ করে। সুতরাং পদ্ধতিগতভাবে উভয় পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। 
৪, বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে পার্থক্য : গতানুগতিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র এবং প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ অধ্যয়ন করা হতাে। এ পদ্ধতির অনুসারিগণ মনে করতেন মানুষের সামগ্রিক জীবনের বিকাশ ও কল্যাণ রাষ্ট্রের মধ্যে সব। মূলত গতানুগতিক পদ্ধতি ছিল আনুষ্ঠানিক আলােচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর আধুনিক পদ্ধতি আনুষ্ঠানিক আলােচনার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। আধুনিককালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ রাজনীতির সাথে যুক্ত ব্যক্তির আচরণকে রাজনীতি আলােচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

৫. তত্বগত পার্থক্য : গতানুগতিক পদ্ধতিতে তত্ত্ব গঠনের উপর জোর দেয়া হতাে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূল্যবােধজনিত তত্ত্ব ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যদিকে, আধুনিক পদ্ধতিতে ব্যাপক পরীক্ষালব্ধ ও প্রয়োগযােগ্য তত্ত্ব গঠনের উপর  জোর দেয়া হয়। আধুনিককালে ব্যবহৃত তত্ত্বসমূহ হলাে কার্যকারণমূলক ও অভিজ্ঞতামূলক তত্ত্ব।

৬. তুলনার ক্ষেত্রে পার্থক্য : উভয় পদ্ধতির মধ্যে তুলনাগত পার্থক্য বিদ্যমান। গতানুগতিক পদ্ধতিতে তুলনার ক্ষেত্রে কেবল কাঠামােকে গুরুত্ব দেয়া হতাে। তখন তুলনামূলক আলােচনার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু আধুনিক অধ্যয়ন পদ্ধতিতে তুলনার ক্ষেত্রে কার্যকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে তুলনামূলক পদ্ধতির সাহায্যে যথার্থ তুলনা করা সম্ভব।

৭, আলােচনার দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য : গতানুগতিক পদ্ধতিতে আলােচনার ক্ষেত্রে নীতি, আদর্শ ও নৈতিকতা ছিল মূল বিচার্য বিষয়। মূল্যবােধ, অনুমান এবং আরােহমূলক পদ্ধতির সাহায্যে যে কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হতাে। কিন্তু আধুনিক পদ্ধতি | রাজনীতির আলােচনা থেকে মূল্যবােধকে পরিহার করে বাস্তব ঘটনার উপর ব্যাপকভাবে নজর দেয়। গতানুগতিক পদ্ধতি | ছিল কি হওয়া উচিত তার বিশ্লেষণ আর আধুনিক পদ্ধতি কি ঘটছে তার বাস্তব ব্যাখ্যা।

৮, আলােচনার প্রকৃতিগত পার্থক্য ; আলােচনার প্রকৃতিগত দিক দিয়েও উভয় পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। গতানুগতিক পদ্ধতির আলােচনা ছিল প্রতিষ্ঠাকেন্দ্রিক এবং আইনমুখী। বিভিন্ন আইনগত নথিপত্র ও সংবিধানের ভিত্তিতে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কাঠামাে ও সংগঠনকে বর্ণনা করা হতাে। অপরদিকে, বর্তমানে রাজনৈতিক অনুসন্ধান পরিচালিত হয় ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে। পর্যবেক্ষণজাত তথ্যের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ব্যাখ্যা করা হয়। 
৯, আলােচনার ধরন সংক্রান্ত পার্থক্য : গতানুগতিক পদ্ধতিতে রাজনীতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বর্ণনাত্মক রীতি অনুসরণ করা হতাে। অন্যদিকে, আধুনিক অধ্যয়ন পদ্ধতিতে বিশ্লেষণমূলক রীতি অনুসরণ করা হয়। 
১০, সময় ও কালের বিচারে পার্থক্য : গতানুগতিক অধ্যয়ন পদ্ধতির সময়কালটি অত্যন্ত দীর্ঘ। প্রাচীন গ্রিক যুগ থেকে শুরু করে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত রাজনীতি অধ্যয়নের এ দীর্ঘসময় গতানুগতিক অধ্যয়নের সময়কাল হিসেবে চিহ্নিত। অন্যদিকে, বিংশ শতাব্দীতে আধুনিক পদ্ধতির সূচনা করে। এ সময় রাজনীতি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যােগ। হয়। এ সময়ের রাজনীতি অধ্যয়নকে আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 
উপসংহার : উপযুক্ত আলােচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গতানুগতিক ও আধুনিক পদ্ধতির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতি অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, গতানুগতিক পদ্ধতিসমূহ রাজনীতি ব্যয়নের ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে; বরং আধুনিককালেও অনেক ক্ষেত্রে গতানুগতিক পদ্ধতিসমূহের প্রয়ােগের কারিতা প্রশ্নাতীত। সুতরাং বলা যায় উভয় ধরনের পদ্ধতিই রাজনীতি অধ্যয়নকে সুসমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।



ভূমিকা পালন করে চলেছে।

Post a Comment

0 Comments