শান্তি আন্দোলন এমন একটি সামাজিক আন্দোলন যা একটি বিশেষ যুদ্ধের সমাপ্তির মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ আদর্শ অর্জন করতে চেষ্টা করে অথবা, আন্তঃমানবিক বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশ্বশান্তি অর্জনের জন্য সংঘর্ষ প্রশমিত করার চেষ্টা করে। আর এক্ষেত্রে শান্তিবাদ, অহিংস প্রতিরােধ, কূটনীতি, বয়কট, নৈতিকতা, যুদ্ধ বিরােধী প্রার্থীকে সমর্থন, নির্দেশনা এবং লবি ইত্যাদির মাধ্যমে উদ্দেশ্য সাধন করতে হয়। যে কোন আন্দোলনের ন্যায় শান্তি আন্দোলন একটি পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শান্তির ধারণা কী?
শান্তি আন্দোলন : শান্তির যে কোন ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পরিচালিত যে কোন আন্দোলনের নামই । শান্তি আন্দোলন। এ আন্দোলন একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করেও পরিচালিত হতে পারে অথবা সংগঠনও করতে পারে অথবা রাষ্ট্র করতে পারে। সুতরাং শান্তি আন্দোলনের কোন সীমা পরিসীমা নির্ধারণ সম্ভব নয়।
গ্রামাণ্য সংজ্ঞা : শান্তি আন্দোলনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Ho-Won Jeong বলেন, “সাধারণত প্রথাগতভাবে শান্তি আন্দোলনের আকাক্ষা হচ্ছে, যুদ্ধ বিলােপের ধারণাটি এতটাই অবশ্যম্ভাবী যে, মানুষের সচেতন স্তরে খুব তাড়াতাড়ি জায়গা করে নেয়। কিছু দল আছে যারা সমাজ থেকে যুদ্ধ প্রতিরােধ না করে যুদ্ধের রূপান্তরের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়।”
তিনি আরাে বলেন, “শান্তি আন্দোলন বিশ্বজনীন ও স্থায়ী শান্তির কথা বলে। আন্দোলনগুলাে নিরস্ত্রীকরণ ও বিশ্ব শাসনব্যবস্থার পক্ষে এর অবস্থান সুদৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করে।”
এ সম্পর্কে Cortright বলেন, “শান্তি আন্দোলন কোন দলের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যকলাপ বুঝায় না। এখানে গতানুগতিক শান্তির সংস্থাগুলােকে ছাড়া বিভিন্ন স্তরের জনগণের অংশগ্রহণের প্রয়ােজন হতে পারে যা যুদ্ধ প্রতিরােধে ও যুদ্ধ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে।”
David P. Barash Charles P. Webel বলেছেন যে, “প্রথাগতভাবে শান্তি আন্দোলনগুলােকে যুদ্ধ ও সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে অবস্থান হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
অথবা অন্যভাবে শান্তি আন্দোলনকে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা নাশ্চতকরণের জন্য অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, দুঃশাসন সাম্রাজ্যবাদ ইত্যাদির বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম তাকেই এককথায় শান্তি আন্দোলন বলা যেতে পারে। অথবা, যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে যুক্ত হওয়ার জন্য সমগ্র পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধবিরােধী যে আন্দোলন তাই শান্তি আন্দোলন। তবে এ আন্দোলন কিছু শর্তের দ্বারা পরিচালিত হয়। নিম্নে এগুলাে উল্লেখ করা হলাে :
১. শক্তি আন্দোলন অহিংস নীতি দ্বারা পরিচালিত : শান্তি আন্দোলন অবশ্যই অহিংস নীতির দ্বারা পরিচালিত হতে । হবে। অন্যের প্রতি হিংস্র আচরণ বা ক্ষতিসাধন থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. সুনিদিষ্ট ইস্যু ও লক্ষ্য বিদ্যমান : শান্তি আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট ইস্যু ও লক্ষ্য থাকতে হবে। কেননা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ব্যতীত কোন আন্দোলনই সফলতার মুখ দেখতে পারে না। | ৩. বৈচিত্র্যপূর্ণ : শান্তি আন্দোলন বিভিন্নভাবে সংঘটিত হতে পারে। এ আন্দোলন কখনাে পরিবেশবাদী, কখনাে পারমাণবিক অস্ত্র বিরােধী, কখনাে সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী আবার কখনাে মানবাধিকার সংক্রান্ত হতে পারে।
৪. শান্তির ধারণাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা : শান্তি আন্দোলন শান্তির ধারণাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করে। যেমন- গান্ধীর অহিংস আন্দোলন। তিনি এ আন্দোলনের মাধ্যমে শান্তির ধারণাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
৫. মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ব্যাপক অংশগ্রহণ : শান্তি আন্দোলনে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের ব্যাপক অংশগ্রহণ হওয়া প্রয়ােজন। কেননা রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির লােক। তারা আন্দোলনে শরিক হলে অবশ্যই এ শান্তি আন্দোলন বেগবান হবে।।
পরিশেষে বলা যায় যে, শান্তি আন্দোলন হচ্ছে শান্তির যে কোন ইস্যু নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে সংগঠিত এ বৃহৎ আন্দোলন। যা যে কোন সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি বিশ্বকেও নাড়িয়ে দিতে পারে।
1 Comments
Nice
ReplyDelete