জাপানের সংবিধানের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট
১৯৪৭ সালের সংবিধানে একটি প্রস্তাবনা, ১১টি অধ্যায় এবং ১০৩ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এ সংবিধানের বিশ্লেষণে প্রধান প্রধান যে বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তা হলােঃ
- জাপানের সংবিধানকে এক শান্তির দলিল (Document of Peace) বলা হয়। বিশ্বের আর কোন রাষ্ট্রের সংবিধানের এরূপ নামকরণ করা হয় নি।
- সংবিধানে জনগণের উপর সার্বভৌম ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। মুখবন্ধে বলা হয়- "আমরা জাপানী জনগণ ঘােষণা করছি যে, সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যন্ত এবং এ সংবিধান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করছি”।
- ‘শান্তিবাদ জাপানী সংবিধানের মূলস্তম্ভ। সংবিধানের সকল জাতির সাথে সহযােগিতার লক্ষ্যে সকলের জন্য, সকল সময়ের জন্য শান্তির উপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়। এ লক্ষ্যে ঘােষণা করা হয় যে, “স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী এবং যুদ্ধের অন্যান্য বাহিনী কখনও পােষণ করা হবে না। রাষ্ট্রের যুদ্ধে লিপ্ত থাকার অধিকার স্বীকার করা হবে না"।
- সংবিধানে মানুষের মৌলিক অধিকারের চিরন্তন অলক্ষ্মনীয়তার কথা জোরালােভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। একই সাথে জনগণকে এ সকল অধিকারের কোন রূপ অপব্যবহার হতে বিরত থাকতে সতর্ক করে দেয়া হয়।
- সম্রাটের ক্ষমতা হ্রাস করা হয় এ সংবিধানে। বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় বিষয়ে ম্রাটের সকল কাজে মন্ত্রিপরিষদের অনুমােদন থাকতে হবে।
- জাপানে সংবিধানের প্রাধান্য ঘােষণা করা হয়। সংবিধানই দেশের সর্বোচ্চ আইন।
- জাপানী সংবিধানে নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা পৃথক করে দেয়া হয় যাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রীভূতকরণ না ঘটে।
- সংবিধানে বিচার বিভাগীয় পর্যালােচনা নীতি গ্রহণ করা হয়। সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য কোন আইন, আদেশ, বিধি বা সরকারী কার্য ব্যবস্থার সাংবিধানিক বৈধতা বিচারের ক্ষমতা সুপ্রীমকোর্টকে দেয়া হয়।
- জাপানের সংবিধান দুস্পরিবর্তনীয়।
- জাপানী সংবিধানে ক্ষমতা পৃথকীকরণ নীতি গ্রহণের পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদকে আইনসভার নিকট। দায়ী করা হয়। এতে ক্যাবিনেট ব্যবস্থার প্রাধান্য লক্ষ্য করা হয়।
- এ সংবিধানে স্থানীয় স্বশাসনের নীতি গ্রহণ করা হয়।
- জাপানের নতুন সংবিধানে নাগরিকদের ৩টি কর্তব্যের উল্লেখ করা হয়। এগুলাে হলঃ (ক) সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা, (খ) কাজ করার দায়বদ্ধতা এবং (গ) কর প্রদানের দায়বদ্ধতা।
অনেক দেশের লিখিত সংবিধানের মতই জাপানেও প্রস্তাবনার মাধ্যমে সংবিধানের উদ্দেশ্য ও নীতি। সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হয়েছে। প্রস্তাবনার শুরুতেই বলা হয়েছে - “আমরা জাপানী জনসমাজ আমাদের | যথাযথভাবে নির্বাচিত জাতীয় ডায়েটের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এ সংবিধান প্রতিষ্ঠা করছি।" এ ঘােষণার মাধমে ৩টি বিষয় লক্ষ্য করা যায়ঃ
- জাপানী শাসন ব্যবস্থায় জনগণই চূড়ান্ত ক্ষমতার উস,
- সংবিধান রচয়িতাগণ জনগণের প্রতিনিধি ছিলেন এবং
- জাপানের জনগণের সম্মতিই ছিলাে এ সংবিধানের ভিত্তি। বাস্তবে জনগণ বা জনগণের প্রতিনিধি। সংবিধান তৈরীর কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন না। আমেরিকার চাপে এ সংবিধান তৈরী এবং ডায়েট কর্তৃক অনুমােদিত হয়েছিল। এ কারণে অনেকে এ সংবিধানকে বিদেশী ভাষায় রচিত সংবিধানের জাপানী অনুবাদ বলে বর্ণনা করেছেন। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনাণ- প্রস্তাবনার এ ঘােষণার মধ্য দিয়ে জাপানের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজকীয় সার্বভৌমত্বের অবসান ঘটানাে হয়েছে।
প্রস্তাবনায় আরাে বলা হয়েছে। সরকার হলাে এক পবিত্র ‘অছি ব্যবস্থা' (a trusteeship) যার কর্তৃত্বের উৎস জনগণ এবং যার ক্ষমতা প্রয়ােগ করেন জনপ্রতিনিধিরা। এছাড়া সমস্ত জাতির সংগে শান্তিপূর্ণ সহযােগিতার ফলগুলাে ও স্বাধীনতার আশীর্বাদ নিয়ে তাদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনগণের সংকল্পের কথা প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সম্রাটকে 'রাষ্ট্রের ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক' বলা হয়েছে। আইনী ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সমতার নীতি, মৌলিক অধিকার এবং জংগীবাদের অবসানের কথাও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
0 Comments