Hot Posts

6/recent/ticker-posts

অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কি বােঝায়? অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিভিন্নরকম হয় কেন?

 অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলতে কি বােঝায়ঃ


মানুষ তার নিজের অস্তিত্বের জন্য এবং নিজের বিকাশের জন্য অনেকরকম তৎপরতায় শামিল হয়। এসবের মধ্যে গিয়ে মানুষ আরও অনেক মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়। এভাবে কখনাে একা কখনাে আরও অনেকের সঙ্গে মানুষ যেসব কাজ করে তার মধ্যে উৎপাদন, ভােগ, বিতরণ, বিনিময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই কাজগুলােকে একসঙ্গে অর্থনৈতিক কাজ বলে। এই কাজগুলাে সকল মানুষ সকল সময়ে একই রকম করতে পারে না। কি উৎপাদন হবে, কিভাবে উৎপাদন হবে, কার জন্য উৎপাদন হবে এসব বিষয় সকল সময়ে একই থাকে না। পার্থক্যটা তাহলে কিভাবে তৈরি হয়? পার্থক্যটা তৈরি হয় প্রধানতঃ মালিকানা ব্যবস্থার জন্য, এরসঙ্গে সামাজিক নানা নিয়ম-কানুন, বিধিমালা ইত্যাদিও কার্যকর হয়। এই যে মালিকানা ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে মানুষ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ভাবে কাজ করে তাকে এক কথায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বলা যায়।

বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

আমরা বর্তমানে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করছি তাকে সাধারণভাবে বলা হয় 'বাজার অর্থনীতি'। তবে এর আরেকটি নাম আছে, সেটি হল : পুঁজিবাদ। কোন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বয়স কাটায় কাটায় বলা যায় না কারণ কোন ব্যবস্থার হঠাৎ করে উদ্ভব হয় না, তা একটি লম্বা সময় ধরে গড়ে উঠতে থাকে। তারপরও মােটামুটি হিসাব করলে বলা যায় যে, বর্তমান এই ব্যবস্থার বয়স বড়জোর তিনশ' বছর। এর আগে হাজার হাজার এমনকি লক্ষ বছর মানুষের অন্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কেটেছে। সেসব অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিন্ন ভিন্ন নামও আছে। সবদেশে সেগুলাের একই রকম চেহারাও ছিল না। আমরা ইতিহাসে এরকম ব্যবস্থা দীর্ঘকাল দেখেছি যেখানে মানুষের অধিকাংশ ছিলেন পাস, তাদের কেনাবেচা করা যেতাে। দাসমালিকরাই সেখানে ক্ষমতাবান ছিলেন এবং সকল অর্থনৈতিক সম্পদের মালিকানাও ছিল তাদেরই হাতে। যুদ্ধে পরাজিত হলে দাস হতে হতাে। প্রাচীন গ্রীসে যে সময় বিখ্যাত নগর-রাষ্ট্রের উয়ৰ হয় সে সময়ও সেখানে দাসব্যবস্থাই ছিল। আরব দেশে ইসলাম প্রবর্তনের সময়ও আমরা দাস ব্যবস্থার অস্তিত্ব দেখতে পাই। আমাদের উপমহাদেশে অবশ্য ঠিক এরকম পাস ব্যবস্থা ছিল না তবে এখানে খুব শক্তিশালী ভাবে যে ব্যবস্থাটি দীর্ঘকাল ধরে ছিল এবং এখনও অনেকক্ষেত্রে আছে সেটি হল বর্ণপ্রথা। এই প্রথায় জন্মগতভাবে একজনের সামাজিক অবস্থান নির্ধারিত হয়ে যায়। তার মেধা বা যােগ্যতা এখানে গেীণ। পাস ব্যবস্থার পর আমরা যে ব্যবস্থা দেখি সেটিকে সাধারণভাবে সামন্তবাদ বলে। এই ব্যবস্থায় ভূস্বামী অর্থাৎ ভূসম্পদের বড় বড় মালিকরাই সমাজে সবচাইতে ক্ষমতাবান। অন্যদিকে বেশিরভাগ মানুষ জমিতে কাজ করেন খাজনার বিনিময়ে, প্রজা হিসেবে বা ভূমিদাস হিসেবে। এই ব্যবস্থাকে সংক্ষেপে জমিদারী ব্যবস্থাও বলা যায়। আমাদের দেশে এই ব্যবস্থার রূপ আর পুরাে ইউরােপের মতাে ছিল। না। ঐতিহাসিকরা বলেন যে, পুরনাে ভারতবর্ষে ব্যক্তিমালিকানাও ইউরােপের মত ছিল না। এখানে রাজা-বাদশা বা সম্রাটদের হাতে ক্ষমতা ছিল অনেক বেশি কেন্দ্রীভূত। তাদেরকেই সকল ভূমির মালিক হিসেবে বিবেচনা করা হতাে। অনেকে এই সমাজকে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সমাজও বলেন। বিভিন্ন ভূস্বামী রাজার প্রতিনিধি হিসেবেই কাজ করতেন। ইউরােপে শিল্প বিপ্লবের প্রক্রিয়া শুরু হয় সপ্তদশ শতক থেকে। এই শিল্প বিপ্লবের প্রক্রিয়াতেই ক্রমে উনিশ শতকের মধ্যে ইউরােপে পুঁজিবাদ একটি ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ব্যবস্থাকে অনেক সময় বাজার অর্থনীতি' বলা হয়। এই ব্যবস্থার মধ্যেই বিশ্বের প্রায় সকল অঞ্চলের মানুষ তখন বসবাস করছেন। আমরা যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সমস্যা আলোচনা করবাে কিংবা তয় বিশ্লেষণ করলাে সেটি এই ব্যবস্থাই। সেজন্য এই ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলাে বিশেষভাবে খেয়াল করতে হবে। সংক্ষেপে এর বৈশিষ্ট্যগুলাে হল নিম্নরূপ:

১. উৎপাদন যন্ত্র ও পুঁজির উপর ব্যক্তি মালিকানা।

২. ব্যক্তিস্বার্থকে মূল গুরুত্ব প্রদান।

৩. মানুষের শ্রমশক্তিসহ সবকিছুর কেনাবেচার দ্রব্য বা পণ্য হিসেবে আবির্ভাব।

৪, বাজারকে লক্ষ্য করে, মুনাফার সর্বোচকরণের উদ্দেশ্যে উৎপাদন।

Post a Comment

0 Comments