Hot Posts

6/recent/ticker-posts

সুশাসনের সংজ্ঞা দাও এবং সুশাসনের প্রধান উপাদান সম্পর্কে আলােচনা কর

সুশাসনের সংজ্ঞা: 



সুশাসনের সংজ্ঞা বিশ্বব্যাংকের মতে, সুশাসন হল এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদ সমাজের সমস্যা ও চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত হয়।


সংস্থাটি সুশাসনকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে, "Governance is the manner in which power is exercised in the management of a countries economic and social resources for development." UNDP এর মতে, সুশাসন হল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্বের বিধিবদ্ধ চর্চা যার মাধ্যমে একটি দেশের উন্নয়ন কার্যাবলি পরিচালনা করা হয়। বিশ্বব্যাংকের মতে, সুশাসন চারটি প্রধান স্তম্ভের উপর নির্ভরশীল। আর এ চারটি স্তম্ভ হল- দায়িত্বশীলতা, স্বচ্ছতা, আইনি কাঠামাে এবং অংশগ্রহণ।

এ প্রসঙ্গে নিচের সারণিতে আলােচনা করা হল-

বিশ্বব্যাংকের ধারণায় সুশাসনের স্তম্ভসমূহ

১. দায়িত্বশীলতা

  • দক্ষতা নির্মাণ

  • সরকারি খাত ব্যবস্থাপনায়
  • দক্ষতা আনয়ন
  • অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা
  • আমলাতন্ত্রের সংস্কার
২. স্বচ্ছতা
  • তথ্য প্রবাহ
  • তথ্য উন্মুক্তকরণ
  • ই-তথ্য সেবা প্রতিষ্ঠা
  • দুর্নীতি প্রতিরােধে
  • কার্যকর পদক্ষেপ
৩. আইনি কাঠামাে
  • আইন প্রয়ােগ
  • আইন ও উন্নয়ন
  • বেসরকারি খাতের উন্নয়নে
  • আইনি কাঠামাে
  • মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ
৪.অংশগ্রহণ
  • অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন
  • প্রভাবিত গােষ্ঠির অংশগ্রহণ
  • রাষ্ট্রীয় এবং সেবামূলক কর্মকান্ডের
  • বিকেন্দ্রিকরণ বেসরকারি
  • সংগঠনের অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা
তথ্য: বিশ্বব্যাংক (১৯৮৯)।

 সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, সু-শাসন হল প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ যার মাধ্যমে নাগরিক নিজের সাথে এবং সরকারি কর্মকর্তা বা এজেন্সির সাথে একত্রে কাজ করতে পারে, যাতে নাগরিকদের আত্ন-মর্যাদা উপলব্ধিতে সমর্থন যােগায় ও আর্থসামাজিক রূপান্তরে সহায়তা করে। রাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামােকে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগাবার জন্য নব্বই দশকে শাসন ব্যবস্থায় একটি নতুন ধারণার অবতারণা হয়েছে। আর এই ধারণাটি হল নানা ধরণের এজেন্সি ও দাতাসংস্থা প্রদত্ত সুশাসন সম্পর্কিত ধারণা।

সুশাসনের প্রধান উপাদান 

নিম্নে সুশাসনের প্রধান উপদান সম্পর্কে আলােচনা করা হল


১. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা হচ্ছে সুশাসনের প্রধান উপাদান। এটি সরকারের স্বচ্ছতা ও আইনের শাসনের উপর নির্ভর করে। জবাবদিহিতার মাধ্যমেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায়। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলােতেই নয় বরং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের জবাবদিহিতাও আবশ্যক। দুর্নীতি কমাতে ও রাজনৈতিক উন্নয়নে জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে, আইন ও নীতি মান্য করে যখন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন করা হয় তখন তাকে স্বচ্ছতা বলে। | সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা প্রণয়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হলে সহজেই সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। স্বচছতা প্রতিষ্ঠা পেলে সরকারি অর্থ ব্যয়ে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যায়।

২. অংশগ্রহণ।

পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রত্যেক নাগরিকের অংশগ্রহণ সুশাসনের অন্যতম একটি উপাদান। সুশাসনের মূল ভিত্তি নারী এবং পুরুষ উভয়রেই অংশগ্রহণ। বিশ্বব্যাংক মনে করে, সকলের অংশগ্রণের মাধ্যমেই কার্যকরী উন্নয়ন সম্ভব। অংশগ্রহণের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণকে অধিক ক্ষমতাশীল করা। রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে। ভােটদান।

৩, আইনের শাসন।

সুশাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে আইনের শাসন। এটি একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রয়ােজনীয় ও বৈধ উপকরণ। মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আইনের শাসন। প্রশাসনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আইনের শাসন থাকা দরকার। আইনের মাধ্যমেই স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা ও আধিপত্য রােধ করা যায়। আইন হতে হবে অবশ্যই | নিরপেক্ষ। রাষ্ট্রের সংবিধান হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের আইনের প্রধানতম উৎস।

৪. নিরপেক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা

পক্ষপাতহীন অবস্থা বা নিরপেক্ষতাই পারে সুশাসন নিশ্চিত করতে। সুশাসন ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা পাবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে। নিরপেক্ষতা আসতে হলে মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকুরি দিহে হবে।অন্যদিকে, দায়িত্বশীলতা না থাকলে কখনােই কোন কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায় না। সরকারি, বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত প্রত্যেকটি কাজের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হতে হবে। একমাত্র দায়িত্বশীলতাই পারে সঠিকসময়ে কাজ সম্পন্ন করতে।

৫. জনপ্রশাসনের উৎকর্ষতা ও বিকেন্দ্রীকরণ

সুশাসন আনয়নের জন্য জনপ্রশাসনের উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। এই উৎকর্ষ সাধন করার জন্য জনপ্রশাসনকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও গতানুগতিক ধারা থেকে বের হতে হবে। জনপ্রশাসনের উর্ষতা সাধন বলতে বােঝায় জনপ্রশাসনে দক্ষতা আনয়ন, প্রযুক্তি ব্যবহারকরণ ও কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা। সুশাসনের আরেকটি উপাদান হচ্ছে বিকেন্দ্রীকরণ। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমেই সকল বিভাগ সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। এটি প্রশাসনের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা কমিয়ে দেয় এবং প্রশাসনকে জনগণের দোড় গােড়ায় পৌছে দেয়। তাই একটি রাষ্ট্রের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের প্রতিটি বিভাগে বিকেন্দ্রীকরণ অপরিহার্য। পরিশেষে বলা যায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা সকলের কাম্য, কিন্তু এটি প্রতিষ্ঠা করা সহজ নয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের সদিচ্ছার পাশাপাশি জনগণের সমর্থন ও সহযােগিতা একান্ত জরুরি।

Post a Comment

0 Comments