Hot Posts

6/recent/ticker-posts

সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়

মুজিবনগর সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট



১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের জনগণের উপর পাকিস্তান সামরিক বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা শুরুর দুদিন পর অর্থাৎ  ২৭ মার্চ ভারতের পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধী কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে উত্থাপিত ও সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এক প্রস্তাব পাস হয়। উক্ত প্রস্তাবে বলা হয় যে, যদি ভারত সরকার জানতে পারে যে, পাকিস্তান কর্তৃক বাঙালিরা আক্রান্ত হয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়েছে, তবে ভারত সরকার বাংলাদেশকে সহযােগিতা করার কথা বিবেচনা করবে। ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল তাজউদ্দিন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীর সহায়তায় দিল্লীতে পৌছান। সেখানে তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করে দেশের অভ্যন্তরিন সাবিক অবস্থা বর্ণনা করেন ইন্দিরাগান্ধী এ কথাই স্পষ্ট করে দেন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে ভারত সরকার বাংলাদেশকে সাহায্য করবে। বৈঠক শেষে তাজউদ্দিন আহমদ দিল্লীতে বসে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী করে একটি সরকার গঠন করেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রহমানকে তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘােষণা করেন। অতঃপর তিনি ঘােষণাটি ভারত সরকারের নিকট পেশ করে তাদের সাহায্য সহযােগিতা কামনা করেন। দিল্লীতে ৭ দিন অবস্থানকালে তাজউদ্দিন আহমদ একটি ভাষণ তৈরি করে ১০ এপ্রিল তারিখ ভাষণটি ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় বেতারের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে প্রচারের ব্যবস্থা করেন। ১০ এপ্রিল তাজউদ্দিন আহমদ ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি কার্গো প্লেনে’ দিল্লী থেকে আগরতলা পৌছান।

উক্ত দিনই (১০ এপ্রিল) ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশের রাজধানী আগরতলায় সর্বপ্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। নবগঠিত বাংলাদেশ সরকার এবং চলমান স্বাধীনতা সগ্রামকে আইনগত ভিত্তি দেয়ার জন্য স্বাধীনতার সনদ ঘােষণা করা প্রয়ােজন ছিল। স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র বা সনদ ছাড়া তাজউদ্দিন আহমদ-এর সরকার গঠনের আইনগত ভিতি ছিল না। সেজন্য এ সরকারকে আইনগত ভিত্তি দেয়ার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র সনদ’ বা আদেশ জারি করা হয়। 
 ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘােষণার আদেশ অনুযায়ী এ সরকার আইনগত ভিত্তি লাভ করে এবং এ আদেশ বলে বাংলাদেশের উপর অস্থায়ী সরকারের আইনগত কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়।১১ এপ্রিল তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে এ নতুন সরকারের সদস্যদের নাম ঘােষণা করেন। ১৩ এপ্রিল এ সরকার গঠন অনুমােদিত হয়। এ সরকারের সর্বসম্মতিক্রমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয় এবং তার অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার অর্পিত হয় সৈয়দ নজরুল ইসলামের উপর। এ সরকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান এবং এর সার্বিক সাহায্য সহযােগিতায় এগিয়ে আসার জন্য বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে এ সরকার  শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে এ সরকারের নতুন নামকরণ করা হয় মুজিবনগর সরকার।

মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ

 ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার (বর্তমান মেহেরপুর জেলা) ভবেরপাড়া গ্রামের বৈদ্যনাথ তলার (পরবর্তী নামকরণ মুজিবনগর) আম্রকাননে অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার বা মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে।

এ সরকারের প্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তারই নামানুসারে বৈদ্যনাথতলার নতুন নামকরণ হয়। মজিবনগর এবং অস্থায়ী সরকারও পরিচিত হয় মুজিবনগর সরকার নামে। মুজিবনগর সরকারের সদর দপ্তর মুজিবনগরে স্থাপিত হয়।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি ছিল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। দেশী-বিদেশী ১২৭ জন সাংবাদিক, গণ-পরিষদের সদস্যবৃন্দ, মুক্তিসেনা এবং কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল। শপথ বাক্য পাঠ করান আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক ইউসুফ আলী।

মুজিবনগর সরকার গঠনের মাত্র দুই ঘণ্টা পর পাকিস্তানি বাহিনীর বিমান মুজিবনগরে বােমাবর্ষণ করে এবং মেহেরপুর দখল করে নেয়। তাই এরপর মুজিবনগর সরকারের সদর দপ্তর কলকাতায় ৮নং থিয়েটার রােডে স্থানান্তরিত হয়।

মুজিবনগর সরকারের কাঠামাে

 ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেয়া মুজিবনগর সরকারের কাঠামোে ছিল নিম্নরূপ :

মুজিবনগর সরকারের কাঠামাে 
রাষ্ট্রপতি                                                                        বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (পাকিস্তান সামরিক শাসকদের হাতে বন্দী) 
উপ-রাষ্ট্রপতি                                                                সৈয়দ নজরুল ইসলাম (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং পদাধিকারবলে সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ)  
প্রধানমন্ত্রী                                                                      তাজউদ্দিন আহমদ 
অর্থমন্ত্রী                                                                        এম. মনসুর আলী । 
স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী                                        এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান, 
পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রী                                                    খন্দকার মােশতাক আহমদ। 
প্রধান সেনাপতি                                                            কর্নেল (অব.) এম. এ. জি. ওসমানী, এম. এন. এ. 
চিফ অব স্টাফ                                                            কর্নেল (অব.) আবদুর রব 
ডেপুটি চিফ অব স্টাফ এবং বিমান বাহিনী প্রধান      গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকার


বিশেষ দায়িত্বে নিযুক্ত গণপ্রতিনিধিবৃন্দ

সাহায্য ও পুনর্বাসন            অধ্যাপক ইউসুফ আলী, এম এন এ  

তথ্য, বেতার ও প্রচার           আবদুল মান্নান, এম এন এ 

ভলান্টিয়ার কোর                আমিরুল ইসলাম, এম এন এ 

বাণিজ্য বিষয়ক বিষয়াদি    মতিউর রহমান, এম এন এ


অস্থায়ী সচিবালয়ের সরকারি কর্মচারীবৃন্দ


সেক্রেটারি জেনারেল            
রুহুল কুদুস।
 ক্যাবিনেট সচিব                    হােসেন তওফিক ইমাম
অর্থ সচিব                                
খন্দকার আসাদুজ্জামান
প্রতিরক্ষা সচিব                        আবদুস সামাদ
পররাষ্ট্র সচিব                           মাহবুবুল আলম চাষী (নভেম্বর ১৯৭১, পদচ্যুত)
তথ্য ও বেতার সচিব                আনােয়ারুল হক খান 
সংস্থাপন সচিব                        নূরুল কাদের খান
কৃষি সচিব                                নূরুদ্দীন আহমদ
স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশ প্রধান    আবদুল খালেক
বহির্বিশ্বে বিশেষ দূত                বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী
নয়াদিল্লীতে মিশন প্রধান           হুয়ায়ুন রশিদ চৌধুরী
কলিকাতায় মিশন প্রধান            হােসেন আলী।
পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান       ডঃ মােজাফফর আহমেদ চৌধুরী
 পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ    ডঃ মােজাফফর আহমেদ চৌধুরী
                                                          ডঃ মােশাররফ হােসেন 
                                                        ডঃ খান সরওয়ার মুর্শেদ
                                                            ডঃ স্বদেশ রঞ্জন বােস
                                                             ডঃ আনিসুজ্জামান
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির প্রধান        ডঃ এ আর মল্লিক 
ইয়ুথ ক্যাম্প পরিচালক                        উইং কমান্ডার এস আর মির্জা 
পরিচালক, আর্টস ও ডিজাইন                কামরুল হাসান এম 
পরিচালক, তথ্য ও প্রচার দফতর            আর আখতার মুকুল
পরিচালক, বেতার কেন্দ্র                         
পরিচালক, চলচ্চিত্র বিভাগ                     আবদুল জব্বার খান
পরিচালক, স্বাস্থ্য দফতর                            ডাক্তার টি হােসেন 
 সহকারী পরিচালক, স্বাস্থ্য দফতর            ডাক্তার আহমদ আলী
রিলিফ কমিশনার                                     শ্রী জেজি ভৌমিক
উপ-সচিব, দেশরক্ষা মন্ত্রণালয়                  আকবর আলী খান
উপ-সচিব, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়                     ওয়ালীউল ইসলাম
উপ-সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়                         খােরশেদুজ্জামান চৌধুরী
ট্রান্সপাের্ট অফিসার                                     এম এইচ সিদ্দিকী
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব                     কাজী লুৎফুল হক
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব                                 ডঃ ফারুক আজিজ খান
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব                                 মামুনুর রশিদ 
অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব                                     সা’দত হােসাইন 
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব                                 কামাল সিদ্দিকী
প্রধানমন্ত্রীর স্টাফ অফিসার                                 মেজর নুরুল ইসলাম (শিশু)
প্রধানমন্ত্রীর পি আর ও                                         আলী তারেক
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পি আর ও                                         রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পি আর ও                                         কুমার শংকর হাজরা
প্রধান সেনাপতির দু’জন এডিসি                             ক্যাপ্টেন নূর ও শেখ কামাল
প্রধান সেনাপতির পিআরও                                     মােস্তফা আল্লামা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অফিসার                        জাওয়াদুল করিম ও আমিনুল হক 

Post a Comment

0 Comments