মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনী- ১৯৭১ যুদ্ধকৌশল ও সামরিক শক্তির বিন্যাস

১৭. মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীঃ

২৫ মার্চের গণহত্যা - বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী গঠন

১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন - ৭১ এর অসহযোগ আন্দোলন


ক। পাকিস্তান বিমান বাহিনী ত্যাগ করে আসা বাঙ্গালী অফিসার, ক্যাডেট ও বিমানসেনারা সেপ্টেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত। স্থলযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মােট প্রায় ৩৫ জন অফিসার ও ক্যাডেট এবং প্রায় ৫০০ বিমানসেনা পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করেন। এইসব বিমান বাহিনীর সদস্যরা যদিও স্থলযুদ্ধে খুবই বিরােচিত ভুমিকা রাখছিলেন। তবুও তাদের মধ্যে একটি স্বাধীন বিমান বাহিনী গঠনের চেতনা খুব প্রবল ভাবে কাজ করছিল। এই চেতনা নিয়েই কিছু সংখ্যক মুক্তিযােদ্ধা পাইলট ভারতীয় বিমান বাহিনী, ভারতীয় সরকার এবং বাংলাদেশ ফোর্সেস (বিডি এফ) এর সাথে বিভিন্ন রকমের আলােচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

খ। কিলাে ফ্লাইট : ১৯৭১ এর সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি ভারত সরকার অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে একটি স্বাধীন বিমান বাহিনী গঠনের জন্য আমেরিকায় তৈরী ১টি পুরানাে ডিসি-৩ বিমান, কানাডার তৈরী ১টি অটার বিমান এবং ফ্রান্সের তৈরী ১টি এ্যালুয়েট-৩ হেলিকপ্টার দেয়। এর সাথে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে একটি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরিত্যক্ত রানওয়ে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এই সীমিত সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। বিমান বাহিনী প্রধান হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে নিয়ােগ দেওয়া হয়। সশস্ত্র বিমান বাহিনী গঠনে গােপনীয়তা রক্ষার্থে এর গুপ্ত নাম হয় 'কিলাে ফ্লাইট'। 'কিলাে ফ্লাইটের' অস্তিত্ব বিডি এফ এবং গােটা কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছাড়া আর কেউ জানতেন না। কিলাে ফ্লাইটে বিমান বাহিনীর পাইলটদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন পি আই এ এবং প্লান্ট প্রটেকশনের পাইলট এসে যােগ দেন। বিভিন্ন সেক্টর হতে যুদ্ধরত মােট ৫৮ জন বিমানসেনাকে এই ফ্লাইটে নিয়ে আসা হয়। এই ফ্লাইটের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয় স্কোঃ লীঃ সুলতান মাহমুদকে। এই সব অত্যুৎসাহী বিমান বাহিনী সদস্যদের সমন্বয়ে ১৯৭১ এর ২৮ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উদ্ধোধন হয়। শুরু হয় কঠোর প্রশিক্ষণ। এই ফ্লাইট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, লালমনিরহাট এলাকায় মােট ৫০টি অভিযান সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করে। এদের মধ্যে মােগলহাটে (১৫ অক্টোবর ৭১), লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁয়ে (১৬ অক্টোবর ৭১), চৌগাছায় (২১ নভেম্বর ৭১), গােদনাইল ও পতেঙ্গায় (৩ ডিসেম্বর ৭১), সিলেটে (৪ ডিসেম্বর ৭১), জামালপুরে (৫ ডিসেম্বর ৭১), মেঘনা নদীতে (৬ ডিসেম্বর ৭১), সিলেটে (৭ ডিসেম্বর ৭১) এবং নরসিংদীতে (১১ ডিসেম্বর ৭১) বিমান হামলা বিশেষ উল্লেখযােগ্য। 

১৮. মুক্তিযুদ্ধে নৌ-বাহিনীঃ 

মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর জন্ম হয়। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে ঐতিহাসিক সেক্টর কমান্ডারদের কনফারেন্সের ঘােষণা মােতাবেক বাংলাদেশ নৌ বাহিনী আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। উল্লেখযােগ্য সংখ্যক বাঙ্গালী অফিসার ও নাবিকগণ পশ্চিম পাকিস্তান ত্যাগ করে দেশে এসে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী গঠন করেন। ভারত থেকে প্রাপ্ত 'পদ্মা' ও 'পলাশ' নামের ছােট দুটি গানবােট এবং ৪৯ জন নাবিক নিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সমস্ত নাবিকগণ শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ ও গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত হন। পাশাপাশি 'অপারেশন জ্যাকপট' নামে নির্ভীক ডুবুরীদল সমুদ্র ও নদী বন্দর সমূহে বিধংসী। আক্রমণ পরিচালনা করেন। এতে হানাদার বাহিনীর ২৬ টি জাহাজ ধ্বংস হয় ও সমুদ্র পথ কার্যতঃ অচল হয়ে পড়ে। নৌ বাহিনীর অপারেশনের মধ্যে হিরণ পয়েন্টের মাইন আক্রমণ (১০ নভেম্বর ৭১), মার্কিন ও ব্রিটিশ নৌযান ধ্বংস (12 নভেম্বর ৭১), চালনা বন্দরে নৌ হামলা (২২ নভেম্বর ৭১), চট্টগ্রাম নৌ অভিযান (০৫ ডিসেম্বর ৭১), পাকিস্তান নৌ ঘাঁটি পিএনএস তিতুমীর অভিযান (১০ ডিসেম্বর ৭১) উল্লেখযােগ্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে নৌ বাহিনীর দুঃসাহসিক অভিযানে। শত্রুপক্ষ নৌ পথে দিশেহারা হয়ে পড়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বহুসংখ্যক নৌ সদস্য শাহাদৎ বরণ করেন। তাঁদের বীরত্ব ও আত্নত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ শহীদ রুহুল আমিন, ইআরএ-১, কে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব প্রদান করা হয়। এছাড়া ০৫ জনকে বীর উত্তম, ০৮ জনকে বীর বিক্রম এবং ০৭ জনকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। জাতি মহান মুক্তিযুদ্ধে নৌ বাহিনীর ভূমিকাকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।

১৯. ব্রিগেড সংগঠন ও অপারেশনঃ

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকটা ছিল গেরিলাভিত্তিক কিন্তু এভাবে গেরিলা যুদ্ধ পাকিস্তানি বাহিনীর সুশিক্ষিত সৈন্যদের পদানত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছিল না। ফলে যুদ্ধ ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনয়ন ও মুক্তাঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর গঠন বিন্যাসের পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এপ্রিল মাসে মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানী সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত ব্রিগেড গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সম্মুখ সমরের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সংগে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার জন্য তিনটি নিয়মিত ব্রিগেড গঠন করা হয়। এরা হচ্ছেঃ 
ক) জেড ফোর্স- লেঃ কর্নেল জিয়াউর রহমানের নামানুসারে জুলাই ৭১ সনের ৭ই জুলাই গঠিত হয় এই বিগ্রেড যার নাম করা হয় জেড ফোর্স। এই ফোর্সের অন্তর্ভূক্ত ছিল ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ৮ ইস্ট। বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ২ ফিল্ড ব্যাটারি আর্টিলারি ও একটি সিগন্যাল কোম্পানী। জুলাই ৭১ থেকে সেপ্টেম্বর ৭১ পর্যন্ত জেড ফোর্স ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর ও রৌমারী এলাকায় যুদ্ধরত থাকে। অক্টোবর থেকে চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত তারা সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এলাকায় যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। জেড ফোর্সের উল্লেখযােগ্য যুদ্ধ সমূহ ছিল কামালপুর যুদ্ধ, বাহাদুরাবাদ ঘাট অপারেশন, দেওয়ানগঞ্জ থানা আক্রমণ, নকসী বিওপি আক্রমন, চিলমারীর যুদ্ধ, হাজীপাড়ার যুদ্ধ, ছােটখাল, গােয়াইনঘাট, টেংরাটিলা, গােবিন্দগঞ্জ, লামাকাজি, সালুটিকর বিমানবন্দর, ধলই, ধামাই চা বাগান, জকিগঞ্জ, আলি ময়দান, সিলেট এমসি কলেজ, ভানুগাছা, কানাইঘাট, ফুলতলা চা বাগান, বড়লেখা, লাতু, সাগরনাল চা বাগান, ছাতক ও রাধানগর।
 খ) কে ফোর্স- লেঃ কর্নেল খালেদ মােশাররফের নামানুসারে সেপ্টেম্বর ৭১ সনে গঠিত হয় এই বিগ্রেড যার নাম করা হয় কে ফোর্স। এই ফোর্সের অন্তর্ভূক্ত ছিল ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ১ ফিল্ড ব্যাটারি (মুজিব ব্যাটারী) আর্টিলারি ও একটি সিগন্যাল কোম্পানী। কে ফোর্সের উল্লেখযােগ্য যুদ্ধ সমূহ ছিল দেউশ মন্দভাগ অভিযান, শালদা নদী অভিযান, পরশুরাম, চিতলিয়া, ফুলগাজী, নিলক্ষ্মীর যুদ্ধ, বিলােনিয়ার যুদ্ধ, চাপিলতার যুদ্ধ, কুমিল্লা শহরের যুদ্ধ, নােয়াখালীর যুদ্ধ, কশবার যুদ্ধ, বারচরগ্রাম যুদ্ধ, মিয়াবাজার যুদ্ধ, গাজীপুর যুদ্ধ, সলিয়াদীঘি যুদ্ধ, ফেনী যুদ্ধ, চট্টগ্রাম বিজয় ও ময়নামতি বিজয়। 
গ) এস ফোর্স- লেঃ কর্নেল কে এম সফিউল্লাহর নামানুসারে অক্টোম্বর ৭১ সনে গঠিত হয় এই বিগ্রেড যার নাম করা হয় এস ফোর্স। এই ফোর্সের অন্তর্ভুক্ত ছিল ২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, এস ফোর্সের উল্লেখযােগ্য যুদ্ধ সমূহ ছিল ধর্মগড় আক্রমন, মনােহরদী অবরােধ, কলাছড়া অপারেশন, বামুটিয়া অপারেশন, আশুগঞ্জ অপারেশন, মুকুন্দপুর যুদ্ধ, আখাউড়া যুদ্ধ, ব্রাহ্মণবাড়ীয় যুদ্ধ, ভৈরব ও আশুগঞ্জ যুদ্ধ, কিশােরগঞ্জ যুদ্ধ, হরশপুর যুদ্ধ, নরসিংদী যুদ্ধ ও বিলােনিয়ার যুদ্ধ।

২০. বি এল এফ (মুজিব বাহিনী):

বিশাল এই জনযুদ্ধে ছাত্র ও যুবক শ্ৰেণী উল্লেখযােগ্য ভূমিকা রাখে। স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভুমিতে ছাত্র আন্দোলনের অবস্থান ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। ৬০ দশকের মাঝামাঝি এই ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের পরিকল্পনায় সংগঠিত হয়ে রাজনৈতিক মতাদর্শের ছাত্রদের সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি সমন্বিত করে। নেতৃস্থানীয় প্রায় ১০,০০০ (দশ হাজার) ছাত্রকে এই বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সমগ্র বাংলাদেশকে ৪টি রাজনৈতিক যুদ্ধ অঞ্চলে বিভক্ত করে এই সমস্ত ছাত্রদেরকে নিজ নিজ এলাকার ভিত্তিতে অবস্থান নেয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়।

এই ৪টি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণকারী নেতৃবৃন্দ ছিলঃ

ক) পর্ব অঞ্চল জনাব শেখ ফজলুল হক মনি ও জনাব আ স ম আবদুর রব। 
খ) উত্তর অঞ্চল জনাব সিরাজুল আলম খান ও জনাব মনিরুল ইসলাম 
গ) পশ্চিম অঞ্চল জনাব আবদুর রাজ্জাক ও জনাব সৈয়দ আহমদ 
ঘ) দক্ষিণ অঞ্চল জনাব তােফায়েল আহমদ ও জনাব কাজী আরেফ আহমেদ

প্রশিক্ষণ শিবিরে কর্মরত ছিলেনঃ জনাব নূরে আলম জিকু, হাসানুল হক ইনু, শরীফ নূরুল আম্বিয়া, আফম মাহবুবুল হক ও মাসুদ আহমেদ রুমীসহ অনেকে। বাংলাদেশ কমুনিষ্ট পার্টির তত্ত্বাবধানে ছাত্র সংগঠন সংগঠিত হয়। এই সশস্ত্র যুব শ্রেণীকে নেতৃত্ব দেন জনাব হারুনুর রশীদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ অনেকে। এ ছাড়াও জনাব কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে এলাকা ভিত্তিক গড়ে ওঠা টাংগাইল মুক্তি বাহিনীর নাম উল্লেখ্যযােগ্য।

২১. স্বাধীন বাংলা বেতারঃ

১৯৭১ পাকিস্তান বিমান বাহিনী আক্রমণে তা ধ্বংস করা হয়। এর পর কিছু দিন আগরতলাতে এবং তারপর ২৫ মে। ১৯৭১ কলকাতা থেকে সম্প্রচার নিয়মিত শুরু করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার বিশাল অবদান রাখে। চরম পত্র, রণাংগন কথিকা, রক্ত স্বাক্ষর, মুক্তিবাহিনীর জন্য প্রচারিত অনুষ্ঠান অগ্নিশিক্ষা, দেশাত্ববােধক গান ইত্যাদি মুক্তিযােদ্ধা ও বাংলাদেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল।

২২, গণমাধ্যমঃ

বিভিন্ন দেশে সংবাদপত্র প্রকাশ করা। এই সব সংবাদপত্রে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা, বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম ও নির্দেশাবলী, নেত্রবৃন্দের বিবৃতি ও তৎপরতা, প্রবাসী বাঙ্গালীদের আন্দোলনের খবর ইত্যাদি প্রকাশিত হত। এদের মধ্যে মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত জয় বাংলা, বাংলাদেশ, বঙ্গবাণী, স্বদেশ, রণাঙ্গন, স্বাধীন বাংলা, মুক্তিযুদ্ধ, সােনার বাংলা, বিপ্লবী বাংলাদেশ, জন্মভূমি, বাংলারবাণী, নতুন বাংলা ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ নিউজ লেটার, বাংলাদেশ সংবাদ পরিক্রমা, আমেরিকা থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ নিউজ লেটার, বাংলাদেশ নিউজ বুলেটিন, শিক্ষা উল্লেখযােগ্য। কানাডা থেকে বাংলাদেশ স্ফুলিঙ্গ নামক সংবাদপত্র প্রকাশিত হত।

২৩. পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী ও তার সহযােগীরা

বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি দখলদার বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। দেশকে শত্রুমুক্ত করার। লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার এক সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সমগ্র জাতিকে একত্রিত করে বিদেশী বন্ধু ও সহযােগী রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ সহযােগিতায় ১৬ ডিসেম্বর '৭১ বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করার এই সশস্ত্র অধ্যায়ে উল্লেখযােগ্য কিছু রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা, ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর সহযােগী হয়ে মুক্তিকামী মানুষের উপর জঘন্য এবং পৈশাচিক অত্যাচার ও হত্যাকান্ড চালায়। এই নির্মম ও নিষ্ঠুর অত্যাচারে শহীদ হয় ৩০ লক্ষ নিরীহ নিরাপরাধ শিশু-কিশােরসহ সর্বস্তরের মানুষ। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয় ২ লক্ষ ৫০ হাজারের অধিক বাংলার নারী। দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় প্রায় এক কোটি মানুষ। সকলের একটি মাত্র অপরাধ "তারা ছিল বাঙালি"। পাকিস্তানের সামরিক শাসকের দাম্ভিক উক্তি " আমি মানুষ চাইনাপূর্ব বাংলার মাটি চাই"। এই পােড়া মাটির নীতিকে সমর্থন দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠন এগিয়ে আসে।

২৪. শান্তি কমিটিঃ

৪ঠা এপ্রিল '৭১ জনাব নুরুল আমিনের নেতৃত্বে অধ্যাপক গােলাম আযম ও খাজা খয়েরউদ্দীন টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করে সর্বপ্রকার রাজনৈতিক সহযােগিতার আশ্বাস প্রদান করেন এবং "নাগরিক কমিটি" গঠনের প্রস্তাব পেশ করেন। ৬ই এপ্রিল '৭১ অধ্যাপক গােলাম আযম ও হামিদুল হক চৌধুরী টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করে "নাগরিক শান্তি কমিটি" গঠনের প্রস্তাব দেন। ৯ই এপ্রিল '৭১ ঢাকায় ১৪০ সদস্য নিয়ে "নাগরিক শান্তি কমিটি" গঠিত হয়। ১৭ই এপ্রিল '৭১ এই কমিটির নাম পরিবর্তন করে "শান্তি কমিটি" রাখা হয় এবং জেলা ও মহকুমা পর্যায়ে এই কমিটি গঠিত হয়। রাজাকার নির্বাচন, নিয়ােগ ও নিয়ন্ত্রণ এই কমিটির অন্যতম দায়িত্ব ছিল।

২৫. রাজাকার বাহিনীঃ

মে '৭১ মওলানা এ কে এম ইউসুফের নেতৃত্বে ৯৬ জন জামায়াত কর্মী নিয়ে খুলনার আনসার ক্যাম্পে এই বাহিনী গঠিত হয়। তিনি এই বাহিনীর নামকরণ করেন "রাজাকার বাহিনী"। এই বাহিনীর মােট সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০,০০০ (পঞ্চাশ) হাজার। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান সহযােগী হিসাবে এই বাহিনী দায়িত্ব পালন করে। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে এই বাহিনীর অত্যাচারের চিহ্ন আজো বিদ্যমান।

২৬. আলবদর বাহিনীঃ

১৯৭১ এর আগস্ট মাসে ময়মনসিংহে এই বাহিনী গঠিত হয়। সম্পূর্ণ ধর্মীয় আদর্শের উপর ভিত্তি করে এই বাহিনীর গঠন ও কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী বিশেষ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে এই বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়। এই বাহিনীর কার্যকলাপের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড অন্যতম। মিরপুর বধ্যভূমি এই বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের সাক্ষ্য বহন করে।

২৭. শরণার্থীঃ

পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বরচিত আক্রমণ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী ভারতে গমন করেন। ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় ১৪১টি শরণার্থী শিবির স্থাপিত করা হয়। এই শিবিরগুলিকে মােট ৯,৮৯৯,৩০৫ বাংলাদেশী আশ্রয় গ্রহণ করেন। পশ্চিম বঙ্গে ৭৪৯৩,৪৭৪, ত্রিপুরাতে ১,৪১৬,৪৯১, মেঘালয়ে ৬৬৭,৯৮৬, আসামে ৩১২,৭১৩ ও বিহারে ৮৬৪১ সংখ্যক বাংলাদেশী শরণার্থী আশ্রয় গ্রহণ করেন।

২৭. বিজয়ের পরিকল্পনা- সম্মিলিত চুড়ান্ত আক্রমণঃ

অক্টোবর '৭১ মাসের মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে সমস্ত সীমান্ত এলাকা ছেড়ে দিয়ে সেনানিবাস অথবা বড় বড় শহর ভিত্তিক অবস্থান নিতে বাধ্য হয়। এই সময়ের মধ্যে মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা মুক্ত করেছিল। নভেম্বর '৭১ এর প্রথম দিকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত হয় সম্মিলিত বাহিনী। এই পর্যায়ে বাংলাদেশের সমগ্র যুদ্ধ এলাকাকে ৪ ভাগে বিভক্ত করে এই যৌথ কমান্ডের নেতৃত্বে সমস্ত সৈন্যবাহিনীকে সমন্বিত করে যুদ্ধ পরিকল্পনা গড়ে তােলা হয়। ৩রা ডিসেম্বর '৭১ পাকিস্তান অতর্কিতভাবে ভারত আক্রমণ করলে যুদ্ধের মােড় পরিবর্তিত হয়। ৬ই ডিসেম্বর '৭১ ভারত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে মুক্তিবাহিনীর মনােবল বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। এই পর্যায়ে সমন্বিত এক যুদ্ধ পরিকল্পনায় সম্মিলিত বাহিনী প্রচন্ড বেগে অগ্রসর হয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত করে।

এই চূড়ান্ত যুদ্ধে ভারতীয় ইষ্টার্ণ কমান্ড অংশ গ্রহণ করে। তাদের সদর দপ্তর ছিল কলকাতাস্থ ফোর্ট উইলিয়ামে এবং অধিনায়ক ছিলেন লেঃ জেনারেল জগজিত সিং অরােরা। এই যুদ্ধে ভারতীয়দের তিনটি কোর (৭ টি ডিভিশন), একটি কমুউনিকেশন জোন, একটি প্যারা বিগ্রেড, ৩টি বিগ্রেড গ্রুপ, ১২টি মিডিয়াম রেজিমেন্ট আর্টিলারী, ৪৮ টি ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী, ১টি আরমার্ড রেজিমেন্ট, ২টি ইন্ডিপেন্ডেন্ট আরমার্ড বিগ্রেড, ৩টি ইঞ্জিনিয়ার বিগ্রেড, ২৯ টি বিএসএফ ব্যাটালিয়ান অংশ গ্রহণ করেন। এই যুদ্ধে ভারতীয়দের শহীদদের সংখ্যা ৬৯ জন অফিসার, ৬০ জন জেসিও ৩ জন এনসিও ও ১২৯০ জন সৈনিক। আহত হন ২১১ জন অফিসার, ১৬০ জন জেসিও, ১১ জন এনসিও এবং ৩৬৭৬ সৈনিক। এছাড়াও যুদ্ধে মিসিং হন ৩ জন জেসিও ও ৫৩ জন সৈনিক।

১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বহু বুদ্ধিজীবিদের পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে। ১৬ই ডিসেম্বর '৭১ বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সােহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তান। সামরিক বাহিনীর ৯৩ হাজার সৈন্য বিনা শর্তে সম্মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন পূর্বাঞ্চলের সম্মিলিত বাহিনী প্রধান লেঃ জেনারেল জগজিত সিং অরােরা ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক লেঃ জেঃ এ কে নিয়াজী। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন মুক্তিবাহিনীর উপ-সেনা প্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। এই অনুষ্ঠানে মুক্তিবাহিনীর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন এস ফোর্স অধিনায়ক লেঃ কর্নেল কে এম সফিউল্লাহ, ২নং সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর এ টি এম হায়দার এবং টাঙ্গাইল মুক্তি বাহিনীর অধিনায়ক জনাব কাদের সিদ্দিকী। ১৬ ডিসেম্বর '৭১ বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। প্রতি বছর এই দিনটি "বিজয় দিবস" হিসাবে পালিত হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ - ১৯৭১ যুদ্ধকৌশল ও সামরিক শক্তির বিন্যাস

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাময় অথচ সবচেয়ে গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায়।' ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাত থেকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী গােটা বাংলাদেশ জুড়ে এমন এক নারকীয় গণহত্যা এবং অকল্পনীয় নৃশংসতা চালিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা পৃথিবীর আর কোথায়ও ঘটেনি।

এই গণহত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে সেদিন রুখে দাঁড়িয়েছিল গােটা বাঙালি জাতি। দখলদারদের বিরুদ্ধে তারা অগণিত চোরাগুপ্তা হামলা পরিচালনা করেছিল যা হানাদার পাকিস্তানীদের দিশেহারা করে তােলে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করে বসলে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ বাহিনী ক্ষিপ্রতার সঙ্গে একযােগে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকিস্তান সৈন্যদের উপর। বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ আর গেরিলা যােদ্ধাদের সহায়তায় যৌথবাহিনী মাত্র ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানী সৈন্যদের আত্মসমর্পনে বাধ্য করে। ফলে বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে একটা নতুন রাষ্ট্রের, যার নাম বাংলাদেশ। নয় মাসের যুদ্ধে প্রায় তিরিশ লক্ষ বাঙালিকে জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছিল - দেশান্তরী হয়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাে আরও এককোটি বাঙালি। পাকিস্তানিদের পৈশাচিকতার শিকার হয়েছিল লক্ষ কোটি নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশু।

এমন একটা অবিশ্বাস্য গণহত্যা ও নির্যাতন - যা প্রায় প্রতিটি বাঙালি ও তাদের পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত্র করেছে, প্রভাব ফেলেছে প্রতিবেশি দেশ ভারত ছাড়াও বিশ্বের প্রতিটি দেশের মানুষের মনে-তেমন ব্যাপক যুদ্ধে অসংখ্য ঘটনা ঘটবে। স্বাভাবিক ভাবেই। শৌর্য, বীর্য ও অসাধারণ বীরত্ব গাঁথার বহু কাহিনীর সৃষ্টি হবে। তবে এটা দুঃখজনক যে এসব ঘটনার অনেকগুলােই সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি। কিছু ঘটনা অনেক বিকৃত হয়েছে। যেহেতু যুদ্ধের শুরুতে কোনাে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বা সংগঠনের অস্তিত্ব ছিলাে না এবং পরবর্তীকালে নেতৃত্ব সংগঠিত হলেও যুদ্ধের দাবানল ছড়িয়ে যাচ্ছিলাে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে, তাই বহু ঘটনার সঠিক লিপিবদ্ধকরণ সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফলে যুদ্ধের কিছু কিছু বিষয়ে নানা ধরনের অসঙ্গতি সুস্পষ্টভাবে লক্ষণীয়। অনেকগুলাে ঘটনার ব্যাপারে প্রচলিত কিছু কাহিনী সত্য বিবর্জিত। এবং সেই অসঙ্গতি দর করার কোনাে পদক্ষেপও নেয়া হয়নি। ফলে সত্যকে প্রতিষ্ঠার কাজ এখনও সফল হয়নি। এক্ষেত্রে ঐতিহাসিকগণ, বিশেষতঃ সামরিক ইতিহাসবিদগণ যাচাই বাছাই করে বিদ্যমান অসত্যের জাল ছিনড়ব করে প্রকৃত ধরবেন- এটাই সময়ের দাবী। মুক্তিযুদ্ধের বেশ কয়েকজন সমরনায়ক এবং সংগঠক ও রাজনীতিবিদ এখনও জীবিত থাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সম্পনড়ব করার সুযােগ এখনও রয়েছে। বিশেষতঃ যুদ্ধকালে গােটা দেশকে সেক্টর ভিত্তিক বিভাজন, মুক্তিবাহিনী প্রধান সহ বিভিনড়ব সেক্টর কমান্ডারদের নিয়ােগ এবং যুদ্ধনীতি ও যুদ্ধ কৌশল। নির্ধারণের মতাে গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস বস্তুনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা প্রয়ােজন।

যুদ্ধ শুরু হয়েছিলাে বিভিন্ন বাঙালি সেনাকর্মকর্তার অসংগঠিত স্বল্পপরিকল্পিত বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে। এইসব বাঙালি সামরিক অফিসারগণ তাঁদের অধিনস্ত বাঙালি সৈন্যদের নিয়ে প্রতিরােধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কোনরূপ কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বা সমন্বয় ছাড়াই। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হবার পরেই গােটা যুদ্ধটা সমন্বিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ আসে। এ উদ্দেশ্যে সেসময় বিচ্ছিনড়বভাবে যুদ্ধরত সামরিক কমান্ডারদের সম্মেলন আহবান করা হয় কলকাতায় ৮ থিয়েটার রােডের (বর্তমানে শেক্সপিয়ার সরণী) এক বাড়িতে। বাড়ীটি ছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ এর একটি অফিস, যা যুদ্ধকালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। সম্মেলন চলে একাত্তরের ১১ থেকে ১৭ই জুলাই পর্যন্ত । প্রতিদিন সকালে শুরু হয়ে আলােচনা চলতাে অনেক রাত পর্যন্ত।

প্রথম দিনের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। যুদ্ধকালীন সশস্ত্র বাহিনী সমূহের প্রধান কর্ণেল (অবঃ) এম. এ. জি. ওসমানী সম্মেলনের প্রম দিন অনুপস্থিত ছিলেন। এই সম্মেলনে বিভিনড়ব অধিবেশনগুলিতে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হচ্ছেন - 
১। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। 
২। কর্ণেল (অবঃ) (পরবর্তীকালে, জেনারেল) এম. এ. জি. ওসমানী। 
৩। লেঃ কর্ণেল (পরবর্তীকালে, মেজর জেনারেল) এম. এ. রব। 
৪। গ্রুপ ক্যাপ্টেন (পরবর্তীকালে, এয়ার ভাইস মার্শাল) এ. কে. খন্দকার। 
৫। মেজর (পরবর্তীকালে, লেঃ কর্ণেল) কাজী নুরুজ্জামান। 
৬। মেজর (পরবর্তীকালে, মেজর জেনারেল) সি. আর. দত্ত। 
৭। মেজর (পরবর্তীকালে, মেজর জেনারেল) কে. এম. শফিউল্লাহ। 
৮। মেজর (পরবর্তীকালে, লেঃ জেনারেল) জিয়াউর রহমান। 
৯। মেজর (পরবর্তীকালে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) খালেদ মােশাররফ। 
১০। মেজর (পরবর্তীকালে, লেঃ জেনারেল) মীর শওকত আলী। 
১১। উইং কমান্ডার (পরবর্তীকালে, এয়ার ভাইস মার্শাল) এম. কে. বাশার। 
১২। মেজর (পরবর্তীকালে, লেঃ কর্ণেল) আবু ওসমান চৌধুরী। 
১৩। মেজর এ. আর, চৌধুরী। 
১৪। ক্যাপ্টেন (পরবর্তীকালে মেজর) রফিকুল ইসলাম। 
১৫। ক্যাপ্টেন (পরবর্তীকালে, মেজর) এম. এ. জলিল। 
সম্মেলনে যুদ্ধের বিভিনড়ব দিক, যুদ্ধক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাদি ও ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলােচনা হয়। এই সম্মেলনে লেঃ কর্ণেল এম. এ. রবকে চীফ অফ স্টাফ এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকারকে ডেপুটি চীফ অফ স্টাফ পদে নিয়ােগের ঘােষণা করা হয়।

যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সেগুলাে হচ্ছে - 
১। সেক্টরে সমূহের সীমানা নির্ধারণ। 
২। গেরিলা যােদ্ধাদের সংগঠিত করা। 
৩। 'নিয়মিত বাহিনী' সংগঠিত করা। 
পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে দীর্ঘ মেয়াদি স্ট্রাটেজি হিসাবে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত সমূহ গ্রহণ করা হয় -

ক) সর্বত্র দখলদার বাহিনীর উপর ক্ষিপ্র আক্রমণ ও চোরাগােপ্তা হামলার জন্য স্বল্পমাত্রার প্রশিক্ষণ দিয়ে বিপুল সংখ্যক গেরিলা যােদ্ধাদের দেশের অভ্যন্তরে পাঠানাে। 
খ) কলকারখানা যেন চলতে না পারে সেজন্যে বিদ্যুতের খুঁটি ও স্টেশনগুলি উড়িয়ে দেয়া।
 গ) পূর্বাঞ্চল থেকে কোনপ্রকার কাঁচামাল বা তৈরি পণ্য পাকিস্তানীদের রপ্তানি করতে না দেয়া এবং তা করা হবে বন্দরের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং বন্দরের মালগুদামগুলি ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে। 
ঘ) পাকিস্তানী সৈন্যদের চলাচলে ব্যবহৃত সকল প্রকার যানবাহন, রেল এবং নৌযান সহ সেনা রসদ সরবরাহ ব্যবস্থা ক্রমাগত আক্রমণ ও ধ্বংস করে দেয়া।


ঘ) গেরিলা সংখ্যাঃ ২০,০০০। যার মধ্যে ৮,০০০ জনকে সংগঠিত করা হয়েছিলাে বিভিনড়ব দলে। ৩৫ শতাংশ গেরিলা এবং সেক্টরবাহিনীর সবাইকে অস্ত্র ও গােলাবারুদ সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়। ঙ) সেক্টর কমান্ডারঃ ক্যাপ্টেন (পরবর্তীকালে, মেজর) রফিকুল ইসলাম। ২ নং সেক্টরঃ

ক) এলাকাঃ ফরিদপুরের পূর্ব অঞ্চল, ঢাকা জেলার দক্ষিণাঞ্চল ও ঢাকা শহর, কুমিল্লা জেলা (আখাউড়া-আশুগঞ্জ রেল লাইনের পূর্ব অংশ ব্যতিত) এবং নােয়াখালী জেলা (মুহুরী নদীর পূর্ব অঞ্চল ব্যতিত)। খ) সাব-সেক্টরের সংখ্যাঃ ৬। গ) সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যাঃ ৪,০০০। ঘ) গেরিলা সংখ্যাঃ ৩০,০০০। ঙ) সেক্টর কমান্ডার মেজর (পরবর্তীকালে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) খালেদ মােশাররফ। ৩ নং সেক্টরঃ

ক) এলাকাঃ কুমিল্লা জেলার কিছু অংশ (আখাউড়া-আশুগঞ্জ রেল লাইনের উত্তর অংশে), সিলেট জেলার কিছু অংশ । (চুরামনিকাটিলাভাই-শায়েস্তাগঞ্জ অক্ষের দক্ষিণ অংশ), ময়মনসিংহ জেলার কিশােরগঞ্জ সাব-ডিভিশন ও ঢাকা জেলার উত্তরাঞ্চল। খ) সাব-সেক্টরের সংখ্যাঃ ১০। গ) সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যাঃ প্রায় ২,৫০০। ঘ) গেরিলা সংখ্যাঃ ২৫,০০০। ঙ) সেক্টর কমান্ডার মেজর (পরবর্তীকালে, মেজর জেনারেল) কে. এম. শফিউল্লাহ্। ৪ নং সেক্টরঃ

ক) এলাকাঃ সিলেট জেলার নিম্নোক্ত অঞ্চল সমূহ - ১. পশ্চিম সীমান্তঃ তামাবিল-আজমিরিগঞ্জ-লাখাই অক্ষ। ২. দক্ষিণ সীমান্তঃ লাখাই-শায়েস্তাগঞ্জ অক্ষ। খ) সাব-সেক্টরের সংখ্যাঃ ৬। গ) সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যাঃ ২,০০০। ঘ) গেরিলা সংখ্যাঃ ৮,০০০। ঙ) সেক্টর কমান্ডার মেজর (পরবর্তীকালে, মেজর জেনারেল) সি. আর. দত্ত। ৫ নং সেক্টরঃ

ক) এলাকাঃ তামাবিল-আজমিরিগঞ্জ অক্ষ বরাবর সিলেট জেলার পশ্চিমের বাকি অংশ। খ) সাব-সেক্টরের সংখ্যাঃ ৬। গ) সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যাঃ ৮০০। ঘ) গেরিলা সংখ্যাঃ ৭,০০০। ঙ) সেক্টর কমান্ডার মেজর (পরবর্তীকালে লেঃ জেনারেল) মীর শওকত আলী। ৬ নং সেক্টরঃ

ক) এলাকাঃ যমুনার পশ্চিমে রংপুর ও দিনাজপুর জেলা, রাণীশঙ্কাইল-পীরগঞ্জ-বীরগঞ্জ লাইনের উত্তরাংশ ও রংপুর জেলার পীরগঞ্জ-পলাশবাড়ী লাইনের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল নিয়ে এ সেক্টর গঠিত হয়েছিল। দিনাজপুরের রাণীশঙ্কাইল, পীরগঞ্জ, বীরগঞ্জ ও রংপুরের পীরগঞ্জ, পলাশবাড়ী ৭ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলাে। খ) সাব-সেক্টরের সংখ্যাঃ ৫। গ) সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যাঃ ১,২০০।


ঘ) গেরিলা সংখ্যাঃ ৬,০০০। ঙ) সেক্টর কমান্ডারঃ উইং কমান্ডার (পরবর্তীকালে, এয়ার ভাইস মার্শাল) এম. কে. বাশার। ৭ নং সেক্টরঃ

ক) এলাকাঃ সমগ্র রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলা, দিনাজপুর ও রংপুরের অংশবিশেষ (দিনাজপুরের রাণীশঙ্কাইলপীরগঞ্জ লাইনের দক্ষিণাংশ ও রংপুরের পলাশবাড়ী-পীরগঞ্জ লাইনের দক্ষিণাংশ। খ) সাব-সেক্টরের সংখ্যাঃ ৮। গ) সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যাঃ ২,০০০। ঘ) গেরিলা সংখ্যাঃ ১০,০০০। ঙ) সেক্টর কমান্ডার মেজর (পরবর্তীকালে লেঃ কর্ণেল) কিউ. এন. জামান। ৮ নং সেক্টরঃ

ক) এলাকাঃ কুষ্টিয়া ও যশােহরের সমগ্র এলাকা, ফরিদপুর জেলার অংশবিশেষ, খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমা। সীমানাঃ উত্তরে পদ্মা নদী। পদ্মা-যমুনার মােহনা থেকে মাদারীপুর পর্যন্ত এর পূর্ব সীমান্ত এবং মাদারীপুর-সাতক্ষীরা কাল্পনিক লাইন ছিলাে দক্ষিণ সীমান্ত। ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর ৯ নং সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত হয়।। খ) সাব-সেক্টরের সংখ্যাঃ ৭। গ) সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যাঃ ২,০০০। ঘ) গেরিলা সংখ্যাঃ ৭,০০০। ঙ) সেক্টর কমান্ডারঃ মেজর (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল) এম, এ, মঞ্জুর। (মেজর এম. এ. মঞ্জুর দায়িত্ব বুঝে নেয়ার আগে মেজর (পরবর্তীকালে, লেঃ কর্ণেল) এম. এ. ওসমান চৌধুরী এই সেক্টরে অভিযান পরিচালনা করেন। ৯ নং সেক্টরঃ

ক) এলাকাঃ সমগ্র বরিশাল, পটুয়াখালী ও খুলনা জেলা (সাতক্ষীরা বাদে), ফরিদপুর জেলার অংশ বিশেষ এবং গােপালগঞ্জ। খ) সাব-সেক্টরের সংখ্যাঃ ৮। গ) সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যাঃ ৭০০। ঘ) গেরিলা সংখ্যাঃ ১০,০০০। ঙ) সেক্টর কমান্ডারঃ ক্যাপ্টেন (পরবর্তীকালে, মেজর) এম, এ. জলিল। ১০ নং সেক্টরঃ

এই সেক্টরের জন্য কোন এলাকা নির্দিষ্ট করা হয়নি। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং নৌ বাহিনীর কমান্ডােদের সমন্বয়ে এই সেক্টর তৈরি করা হয়েছিলাে যাতে করে স্বাধীন এলাকাগুলােকে রক্ষা করা যায় এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সকল এলাকায় প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে কার্য-ম চালিয়ে নিতে পারে। নৌ বাহিনী কমান্ডােদের বিভিনড়ব সেক্টরে পাঠানাে হতাে পাকিস্তানী নৌযান ধ্বংস ও বন্দর এলাকাগুলােয় আক্রমণ চালানাের জন্য। অভিযান পরিচালনার সময় কমান্ডােরা ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডারদের তত্ত্বাবধানে ও পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করতেন। মিশন শেষে তারা ফিরে এসে ১০ নং সেক্টরের সদস্য হিসাবে অবস্থান করতেন। ১১ নং সেক্টরঃ

ক) এলাকাঃ কিশােরগঞ্জ মহকুমা বাদে সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা। উত্তরে যমুনা নদীর তীরে বাহাদুরাবাদ ঘাট ও ফুলছড়িঘাট এই সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিলাে।


খ) সাব-সেক্টরের সংখ্যাঃ ৮। গ) সেক্টরবাহিনী সদস্য সংখ্যাঃ এক ব্যাটালিয়ন। ঘ) গেরিলা সংখ্যাঃ ২০,০০০। ঙ) সেক্টর কমান্ডার মেজর (পরবর্তীকালে লেঃ কর্ণেল) এ. তাহের।

পরবর্তীকালে তিনটি রেগুলার আর্মি ব্রিগেড গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রত্যেক ব্রিগেডকেই 'ফোর্স' নামে অভিহিত করা হয়। এগুলাে হলাে, মেজর জিয়াউর রহমানের তত্ত্বাবধানে 'জেড' ফোর্স, মেজর কে, এম, শফিউল্লাহ্'র তত্ত্বাবধানে 'এস' ফোর্স এবং মেজর খালেদ মােশারফের তত্ত্বাবধানে 'কে' ফোর্স। 'কে' ফোর্স গঠন করা হয় ২ নং সেক্টরে। মেজর খালেদ মােশারফ সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালনের সাথে এই ফোর্সেরও নেতৃত্ব দেন।

'এস' ফোর্স গঠন করা হয় ৩ নং সেক্টরে। মেজর কে. এম. শফিউল্লাহ্ সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালনের সাথে এই ফোর্সেরও নেতৃত্ব দেন।'জেড' ফোর্স মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সিলেট ও ময়মনসিংহের জেলার উত্তরে ভারত সীমান্ত এলাকায় এই ফোর্স গঠন করা হয়। মেজর জিয়াকে কোন সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তিনি শুধুমাত্র 'জেড'ফোর্সের কমান্ডার ছিলেন। অন্যদিকে, মেজর কে, এম, শফিউল্লাহ্ (৩ নং সেক্টর এবং 'এস' ফোর্স) এবং মেজর খালেদ মােশারফ (২নং সেক্টর এবং 'কে' ফোর্স) ছিলেন একইসাথে সেক্টর ও ফোর্স কমান্ডার।

সেক্টর সমূহের সীমানা নির্ধারণ ও কমান্ডার নিয়ােগের পর সেনাবাহিনী, ইপিআর ও পুলিশবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে। একটি নতুন নিয়মিত যােদ্ধা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে একটি গেরিলা বাহিনী গড়ে তােলার ব্যাপারে দীর্ঘ আলােচনা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অসামরিক জনগণের মধ্য থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের অল্প সময়ের মধ্যে প্রয়ােজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে এক বিশাল গেরিলা বাহিনী গড়ে তােলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। 'আক্রমণ কর, সরে পড়'- এই কৌশল অবলম্বন করে গেরিলারা সারাদেশব্যাপী পাকিস্তানীদের উপর আক্রমণ চালাতে থাকবে। প্রতিদিন এমনি। অসংখ্য ছােট-বড় আক্রমণে পাকিস্তানিদের হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলবে, তাদের লােকক্ষয় হতে থাকবে। অব্যাহতভাবে এবং ক্রমান্বয়ে ভেঙ্গে পড়তে থাকবে তাদের মনােবল। এমনি করে আঘাতের পর আঘাতে পর্যদুস্ত ও মনােবল ভেঙ্গে পড়া পাকিস্তানী সৈন্যদের উপরে সঠিক সময়ে বিদ্যৎগতির ক্ষিপ্র ও তীব্র, স্বল্প মেয়াদি আক্রমণ। পরিচালনা করলে যুদ্ধের মাঠে তাদের পরাজয় অনিবার্য - এটাই ছিলাে চূড়ান্ত রণকৌশল। পনের জুলাই সন্ধ্যায় সেক্টর কমান্ডার ও ফোর্স কমান্ডারগণ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সেখানে অবশ্য কোন প্রকার মত বিনিময় বা সেক্টর সমূহের পরিস্থিতি নিয়ে কোন আলােচনা হয়নি। এটি ছিলাে কেবলই শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতামাত্র। সেক্টর এবং ফোর্স কমান্ডারগণ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির নিকট শপথ গ্রহণ করেন এবং আনুষ্ঠানকিভাবে বাংলাদেশ সরকারে প্রতি আনুগত্য ঘােষণা করেন। সেক্টর কমান্ডার এবং তিনটি ফোর্সের কমান্ডারগণ নিয়ােগ লাভ করেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের নিকট থেকে। সাব-সেক্টর কমান্ডারগণের নিয়ােগ বাংলাদেশ সরকার কিংবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে দেয়া হয়নি। তারা নিয়ােগ লাভ করেছিলেন স্ব-স্ব সেক্টর কমান্ডারগণের কাছ থেকে।

সেক্টর কমান্ডার এবং তিনটি ফোর্সের কমান্ডারগণ নিয়ােগ লাভ করেছিলেন বাংলাদেশ সরকারের নিকট থেকে। সাবসেক্টর কমান্ডারগণের নিয়ােগ বাংলাদেশ সরকার কিংবা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে দেয়া হয়নি। তারা নিয়ােগ লাভ করেছিলেন স্ব-স্ব সেক্টর কমান্ডারগণের কাছ থেকে।

Post a Comment

Previous Post Next Post