Concepts and Definition of Globalization বিশ্বায়নের ধারণা নির্মাণ করা খুব সহজ নয়। একে অভিহিত করা হয়েছে একটি প্রক্রিয়া হিসেবে। বিশ্বায়ন নির্দিষ্ট কোন একটি বিষয়ের উপর সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি বিশ্বজনীন ও সর্বজনীন। মার্শাল ম্যাকলােহান-এর মতে, ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ ধারণার পরিবর্তিত রূপই হচ্ছে। বিশ্বায়ন। এটি একটি ধারণা (Concept)-এর অস্তিত্ব। পূর্বেও ছিল তবে ভিন্নভাবে এবং বর্তমানেও বিদ্যমান বা চলমান। সাধারণত বিশ্বায়ন বলতে আমরা বুঝি অর্থ ও সম্পদের অবাধ প্রবাহ, সীমানাবিহীন বিশ্বব্যবস্থা, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদারীকরণ অর্থাৎ এমন একটি প্রক্রিয়া যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলাে সীমানামুক্তকরণ ও আন্তর্জাতিকীকরণ। এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত শতাব্দীর শেষ দশকে। এখন তা দ্রুত এগুচ্ছে, দেশে দেশে আমদানি শুল্ক কমছে। পণ্য আমদানিকে বাধাগ্রস্ত করে এমন নীতিগুলাে আর থাকছে না। আমরা ক্রমেই এক বিশ্বরাষ্ট্রের নাগরিকে পরিণত হচ্ছি। এতে অবশ্যই চমক আছে। তবে এতে শংকিত হবারও অনেক কারণ বিদ্যমান। কারণ এ প্রক্রিয়া গরিব দেশগুলােতে দারিদ্র্য বাড়াতেই সহায়তা করছে। আর অঙ্কুরেই বিনষ্ট করছে ঐ দেশগুলাের শিল্পোন্নয়নের উদ্যোগ।
আসলে বিশ্বায়ন ইংরেজি ‘গ্লোবালাইজেশন' শব্দের সার্থক অনুবাদ নয়। কারণ বাংলা বিশ্বায়ন শব্দটার মধ্যে একটা সমতা সমতা ভাব আছে। মনে হয়, সারাবিশ্বের মানুষকে একই ধরনের কর্ম, উপার্জন, বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি সুবিধা দেয়ার জন্য নিয়মটা করা হচ্ছে। একে সাধারণ পুজিতান্ত্রিক নিয়মের পরিবর্তিত রূপ বলেও মনে করেছিলেন অনেকে। উন্নয়নশীল দেশের অনেক অথতাবদ মনে করেছিলেন, মার্কসীয় দর্শনের বিশ্বব্যাপী শ্রম ও সম্পদের সাধারণীকরণ প্রত্যয়টিকে ভাও করে বিশ্বায়নের তত্ত্ব ও কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। আসলে সবটাই ভ্রান্তি। কারণ কোন পরনাে তত্তের উপর ভিত্তি করে গােবালাইজেশন বিষয়ক ধারণা দেয়া হয় নি। এ নিছক এক অর্থনৈতিক কর্মকৌশল। নিউ ইকোনমি বা নতন অর্থনীতি বলে যে পরিবর্তনগুলাের কথা বলা হচ্ছে। পশ্চিম গােলার্ধে, তাও এ গ্লোবালাইজেশনেরই অন্তবর্তী বিষয়।
অ্যাডাম স্মিথ তাঁর বিখ্যাত ‘ওয়েলথ অব নেশনস’ গ্রন্থে মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষ সমর্থন করেছেন সুস্পষ্টভাবে। ডেভিড রিকার্ডো তাতে আরও মাত্রা সংযােজন করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তুলনামূলক সুবিধার তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। এর পিছনে আছে বিশ্বায়ন ও শ্রম বিভাজনের যুক্তি। কোন একটি দেশ একটি উৎকৃষ্টমানের পণ্য প্রস্তুত করতে পারে। অপর একটি পণ্য প্রস্তুত করতে পারে ভিন্ন 'একটি দেশ। এ ক্ষেত্রে মুক্ত বাণিজ্যের ফলে দু’টো দেশই লাভবান হতে পারে। ভােক্তারা সস্তায় পেতে পারে উৎকৃষ্টমানের পণ্য। এতে অদক্ষতা থাকে না। তাছাড়া সব পণ্যই সবদেশে উৎপাদন সম্ভব হয় না। তাই পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রেও আছে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা। ফলে জন্ম নিয়েছে। এক বিশ্ব রাষ্ট্রতত্ত্বের। এ তত্ত্বের গ্রহণযােগ্যতা যতই ব্যাপক হােক না কেন, জটিলতা দেখা দিয়েছে। এর প্রয়ােগের ক্ষেত্রে। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় লাভবান হয়েছে মূলত শিল্পোন্নত দেশগুলাে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো।
- অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আইয়ুবুর রহমান ভূঁঞা (Ayubur Rahman Bhuiyan) বলেন, "Globalization means trade liberalization, such as deregulation, privatization and free trade in the global economy." অর্থাৎ “বিশ্বায়ন বলতে বাণিজ্য উদারীকরণ, যেমন : নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ, বেসরকারিকরণ এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে মুক্ত ও অবাধ বাণিজ্যকে বুঝায়। (A. R. Bhuiyan, "Globalization and its impact on growth, trade and industrial polices in Bangladesh", Social Science Review, Dhaka University, Vol. 15, No. 3, 1998.)
- প্রখ্যাত জার্মান রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদ জর্জ শেল (Gyorgy Szell) লিখেছেন, "Globalization is the benchmarking for economic activities in which the standards in profitmaking is the deciding factor. It is the profit motive that decides the rule of the game. It is the 11s Dollar and the NYSE which set the standard and the Shareholder value has become the new magic word. This takes us to this premise that 'finance capital' is the most crucial force in the whole process of globalization." (Gyorgy Szell, "Globalization in East Asia : A View from Europe", Report No 20, Institute of Social Science, Chuo University, Tokyo, 2000, p. 33.)
সুতরাং বলা যায় যে, বিশ্বায়নকে এমন একটি প্রক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করা যায় যা রাষ্ট্র ও সম্প্রদায়ের পুরনাে কাঠামাে ও সীমানাকে অবলুপ্ত করছে। বিশ্বায়ন কোন একক প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি একটি সর্বব্যাপী ও সার্বিক প্রক্রিয়া। বিশ্বায়ন রাষ্ট্রীয় সীমানার প্রাচীর ভেঙ্গে অর্থনৈতিক যােগাযােগ ও লেনদেন, সাংস্কৃতিক আদান প্রদান, রাজনৈতিক মিথস্ক্রিয়া প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রেই ব্যাপকতর পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ফলে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাচেতনা এবং বিশ্বাসের ক্ষেত্রে একটি বৈশ্বিক অবকাঠামাে তৈরি হয়েছে।
পররাষ্ট্রনীতি বলতে কি বুঝ?
উন্নয়নশীল দেশসমূহে বিশ্বায়নের প্রভাব
Globalization and Developing Countries
বিশ্বায়নের যে ধারণা, প্রক্রিয়া ও প্রবণতা তা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে কোন না কোনভাবে স্পর্শ করলেও এর প্রভাব সকল রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তির ক্ষেত্রে সমান নয়। তাই পৃথিবীর সকল দেশ এ প্রক্রিয়ায় আবশ্যকীয়ভাবে অংশগ্রহণ করলেও এর প্রভাব কোন দেশের ও অঞ্চলের উপর কতটুকু পড়ছে, কারা কোন প্রক্রিয়ায় এর কতটুকু ফল ভােগ করছে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলাে বিশ্বায়নের ফলে উন্নত দেশগুলাের সাথে আবশ্যকীয়ভাবে নানা ধরনের মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হলেও প্রকৃতপক্ষে এ থেকে তাদের লাভবান হওয়ার সুযােগ খুবই কম। ইতােমধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলাে তাদের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এ সম্পর্কে নিচে আলােচনা করা হলাে ।
(ক) বিশ্বায়নের অর্থনীতি: আসলে বিশ্বায়নের অর্থই হচ্ছে উচ্চতর পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বায়ন হচ্ছে গােটা বিশ্বকে একটি একক বাজার হিসেবে ধরে নিয়ে অর্থনৈতিক উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তােলার প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে পুঁজির আধিপত্য এবং পুঁজিবাদী দেশগুলাের স্বার্থকে টিকিয়ে রাখার জন্যই স্বাক্ষরিত হয় গ্যাট (GATT) চুক্তি, প্রতিষ্ঠা করা হয় WTO-এর মত সংস্থা। ইতােমধ্যে এ ধরনের বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার নেতিবাচক ফল সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্য ক্রমাগত বৃদ্ধি, বিশ্বজুড়ে ব্যাপক দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা আর মানব বঞ্চনাই এ ধরনের পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে। তাই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন মাত্রা ও পর্যায়ে বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সঞ্চারিত হচ্ছে। এ ধরনের দ্বন্দ্ব বা ক্ষোভের একটি মাত্রা হলাে উত্তরদক্ষিণ ও দক্ষিণের দেশগুলাে অভিযােগ করছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা চালুর ফলে প্রতি বছর ২৭০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য বৃদ্ধির যে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল তার সিংহভাগই নিয়ন্ত্রণ করবে বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা উন্নত দেশগুলাে।
(খ) বিশ্বায়নের সংস্কৃতি জ্যান নেডারভীন (Jan Nederveen) মনে করেন, বিশ্বায়ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি সংকর সংস্কৃতি (Hybrid culture) সৃষ্টি করবে। তিনি এর নাম দিয়েছেন তৃতীয় সংস্কৃতি'। এ নয়া সংস্কৃতি এখন স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। Jayaweera-এর মতে, বিশ্বায়ন থেকে যে সামাজিক সম্পর্ক উদ্ভূত হয় তা গােটা বিশ্বকে ক্রমান্বয়ে একটা একক প্রধান অর্থনীতি, একক সরকার ব্যবস্থা এবং একক সংস্কৃতিতে সংহত করে। এ একক সংস্কৃতি স্থানীয় সংস্কৃতির পৃথক বৈশিষ্ট্য ও জনগণের নিজস্ব সাংস্কৃতিক চাহিদার প্রতি অসংবেদনশীল, কৃত্রিম ও অগভীর। কারণ সংস্কৃতির মৌলিক যে বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ জনগণের আচারআচরণ, জীবনযাত্রার প্রতিফল ঘটানাে তা এ সংস্কৃতিতে অনুপস্থিত। বরং বিশ্বায়ন থেকে জাত এ নয়া সংস্কৃতি বিনােদন ও যৌনতার পৃষ্ঠপােষকতাই কেবল করে থাকে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সংস্কৃতির এ ধারা প্রায় সর্বাংশেই উন্নত থেকে স্বল্পোন্নত দেশের দিকে ধাবিত।
(গ) তথ্যের পণ্যায়ন বিশ্বায়ন ও বিশ্বায়নের আরেকটি অভিঘাত হলাে এটি পরাজাতিক পশ্চিমা সংস্কৃতিকে আমাদের জীবন যাপনের একমাত্র মডেল হিসেবে চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে ‘প্যাকেটবন্দি দর্শক-শ্রোতা যাদের আনুগত্য ব্রান্ডনেম পণ্যে আবদ্ধ আর সামাজিক বাস্তবতাকে যারা উপলব্ধি করে পণ্য পরিতৃপ্তির মাপকাঠির মধ্য দিয়ে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে এমন এক ভােক্তাসংস্কৃতি যে সংস্কৃতিতে প্রথাগত উৎপাদনমুখী কাজে নীতির চেয়ে ভােগের নীতিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ভােক্তা সংস্কৃতির এ বিস্তার তথ্যকে বিক্রয়যােগ্য, লাভজনক একটি পণ্যে পরিণত করেছে। আর তথ্যকে পণ্যে পরিণত করে একে যত বেশি সম্ভব গ্রাহকের কাছে আকর্ষণীয় করে তােলার তাড়না থেকেই দেখা দিয়েছে তথ্যমাধ্যমের বাণিজ্যিকীকরণের প্রবণতা। তাছাড়া এসব তথ্যমাধ্যম উন্নয়নশীল বিশ্বের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের দারিদ্র্যকে পুঁজি করে উল্টো নিজেদের ব্যবসায় করার অপকৌশল নিয়েই ব্যস্ত।
(ঘ) বিশ্বায়ন ও সমাজব্যবস্থা বিশ্বায়ন আরেকটি অভিঘাত হানছে সমাজব্যবস্থায়। বিশ্বায়নের ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ তাদের নিজ নিজ সামাজিক রীতিনীতি, আচার-আচরণ ও মূল্যবােধকে হারিয়ে ক্রমেই একটি পশ্চিমা ধ্যানধারণানির্ভর সমাজব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার সমাজসমূহ তাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে এবং তা নতুন প্রজন্মকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। ফলে এ সকল সমাজের কাঠামাে, সামাজিক স্তরায়ন, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক বিশ্বাস ও মূল্যবােধ সর্বত্রই এ ধরনের হযবরল অবস্থা দেখা দিচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিচ্ছে অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য। পরিবার কাঠামােতে আসছে ভাঙন, পরিচ্ছন্নবােধ ও বিশ্বাসের স্থান দখল করছে যৌনতা ও হিংস্রতানির্ভর এক বিকৃত সামাজিক ব্যবস্থা।
(ঙ) বিশ্বায়ন ও শিক্ষা বিশ্বায়নের অভিঘাত থেকে তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থাও মুক্ত নেই। শিক্ষা মূলত মানুষের আত্মিক ও চিন্তাশক্তির বিকাশ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতার সাথে খাপ খাইয়ে চলার যােগ্যতা অর্জনে সহায়তা করে। বিশ্বায়নের ফলে তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা তার স্থানিক সম্প্রদায়গত (Community) বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ভিনদেশী রঙে একটি মেকি রূপ ধারণ করেছে। এ শিক্ষাব্যবস্থা অভীষ্ট জনগােষ্ঠীর জীবনবােধ ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থারই সৃষ্টি করে থাকে। এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত জনগণও তাদের বাস্তব জীবনে তেমন উপকৃত হতে পারে না। কেননা এ শিক্ষার সিলেবাস, পাঠদান পদ্ধতি এবং অন্তর্নিহিত ধ্যানধারণার সবই অভীষ্ট জনগােষ্ঠীকে একটি ভিনদেশী তথা পশ্চিমা ব্যবস্থার সাথে পরিচিত করে তােলার মানসে রচিত। ফলে এ সকল সমাজে এমন একটি শ্রেণীর জন্ম হচ্ছে, যারা দেশীয় সবকিছুতেই নাক ছিটকায় যা যে কোন জাতির উন্নতির জন্য মারাত্মক হুমকি।
(চ) বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান যুগকে চিহ্নিত করা হচ্ছে মানব ইতিহাসের চতুর্থ যােগাযােগ বিপ্লবের কাল হিসেবে। মানুষ যখন ভাষার ব্যবহার শুরু করল, প্রথম বিপ্লবটি শুরু হয়েছিল তখন। লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন সূচনা করেছিল দ্বিতীয় বিপ্লবের। তৃতীয় বিপ্লটি ঘটেছিল স্থানান্তরযােগ্য মুদ্রাক্ষরভিত্তিক মুদ্রণ ও প্রকাশনা প্রযুক্তির উদ্ভাবনের মাধ্যমে। আর চতুর্থ বিপ্লবটি হচ্ছে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান বিপ্লব। উপগ্রহ সম্প্রচার প্রযুক্তি, আধুনিক টেলিযােগাযােগ ব্যবস্থা ও কম্পিউটার -এ তিনের সমন্বয়ে বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে তথ্যের মহাসরণী (Information highway) নামে দ্রুতগতির এক বিস্তৃত যােগাযােগ নেটওয়ার্ক। উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল নির্বিশেষে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি জাতি ও দেশই কোন না কোনভাবে এ যােগাযােগ নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তিগতভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা উন্নত দেশগুলাে দুর্বল তথ্য অবকাঠামাের স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলাের চেয়ে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে। এমনকি এ সকল দেশে উন্নত দেশগুলাের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলে সাংস্কৃতিক অবনয়ন, ব্যক্তির গােপনীয়তা ও নিরাপত্তা লঙ্ন, সমাজের পরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানগুলাের ধ্বংস ও সর্বোপরি সামাজিক ক্ষমতার ভারসাম্য ও অর্থনৈতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ বিনষ্ট হচ্ছে।
বাফার স্টেট বলতে কি বুঝ
উপরােক্ত আলােচনা শেষে বলা যায় যে, বিশ্বায়নের যে বিস্তৃত প্রক্রিয়া ও অভিঘাত তা উন্নয়নশীল বিশ্বকে উন্নত বিশ্বের সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে অনেক সুবিধাদানের কথা ছিল। কেননা বিশ্বায়নের ফলে এ সকল দেশ উন্নত দেশগুলাের খুব কাছাকাছি যাওয়ার সুযােগ পায় এবং আধুনিক জীবনবােধের সাথে পরিচিত হতে পারে। এ জীবনবােধ তাদের একটি উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখায়। উন্নত দেশগুলাের সাথে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত সহযােগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। ফলে অনুন্নত দেশগুলােতে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। মােটের উপর সকলে লাভবান না হলেও কিছু কিছু দেশ যেমন ঃ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীনসহ আরাে অনেক দেশই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে সক্ষম হয়। এমনকি ক্রমাগত অভিঘাত সহ্য করেও অনেক দেশ তাদের আপন আপন ধ্যানধারণা, প্রতিষ্ঠান, পদ্ধতি টিকিয়ে রেখে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সকল ক্ষেত্রে প্রতিযােগিতার সামর্থ্য অর্জন করছে।
সুতরাং বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকে যদি সবার জন্য উপযােগী করতে হয় তাহলে উন্নত দেশগুলােকে অবশ্যই অনুন্নত দেশের জনগণের লাভালাভের দিকে নজর দিতে হবে। এ জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলােকেও অন্যের সংস্কৃতি গ্রহণে সচেতন এবং আপন আপন সংস্কৃতির উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে। প্রতিযােগিতার মাঠে নেমে প্রতিযােগীর ঘাড়ে দোষ না চাপিয়ে প্রতিযােগীকে হারানাের সামর্থ্য অর্জনের মাধ্যমে জিততে হবে। কেননা আমরা যত অপছন্দই করি না কেন এ মুহূর্তে বিশ্বায়নের বৃহত্তর প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসার সুযােগ নেই।
(ক) বিশ্বায়নের অর্থনীতি: আসলে বিশ্বায়নের অর্থই হচ্ছে উচ্চতর পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্বায়ন হচ্ছে গােটা বিশ্বকে একটি একক বাজার হিসেবে ধরে নিয়ে অর্থনৈতিক উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তােলার প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে পুঁজির আধিপত্য এবং পুঁজিবাদী দেশগুলাের স্বার্থকে টিকিয়ে রাখার জন্যই স্বাক্ষরিত হয় গ্যাট (GATT) চুক্তি, প্রতিষ্ঠা করা হয় WTO-এর মত সংস্থা। ইতােমধ্যে এ ধরনের বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার নেতিবাচক ফল সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্য ক্রমাগত বৃদ্ধি, বিশ্বজুড়ে ব্যাপক দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা আর মানব বঞ্চনাই এ ধরনের পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছে। তাই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন মাত্রা ও পর্যায়ে বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সঞ্চারিত হচ্ছে। এ ধরনের দ্বন্দ্ব বা ক্ষোভের একটি মাত্রা হলাে উত্তরদক্ষিণ ও দক্ষিণের দেশগুলাে অভিযােগ করছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা চালুর ফলে প্রতি বছর ২৭০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য বৃদ্ধির যে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল তার সিংহভাগই নিয়ন্ত্রণ করবে বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা উন্নত দেশগুলাে।
(খ) বিশ্বায়নের সংস্কৃতি জ্যান নেডারভীন (Jan Nederveen) মনে করেন, বিশ্বায়ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি সংকর সংস্কৃতি (Hybrid culture) সৃষ্টি করবে। তিনি এর নাম দিয়েছেন তৃতীয় সংস্কৃতি'। এ নয়া সংস্কৃতি এখন স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত। Jayaweera-এর মতে, বিশ্বায়ন থেকে যে সামাজিক সম্পর্ক উদ্ভূত হয় তা গােটা বিশ্বকে ক্রমান্বয়ে একটা একক প্রধান অর্থনীতি, একক সরকার ব্যবস্থা এবং একক সংস্কৃতিতে সংহত করে। এ একক সংস্কৃতি স্থানীয় সংস্কৃতির পৃথক বৈশিষ্ট্য ও জনগণের নিজস্ব সাংস্কৃতিক চাহিদার প্রতি অসংবেদনশীল, কৃত্রিম ও অগভীর। কারণ সংস্কৃতির মৌলিক যে বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ জনগণের আচারআচরণ, জীবনযাত্রার প্রতিফল ঘটানাে তা এ সংস্কৃতিতে অনুপস্থিত। বরং বিশ্বায়ন থেকে জাত এ নয়া সংস্কৃতি বিনােদন ও যৌনতার পৃষ্ঠপােষকতাই কেবল করে থাকে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সংস্কৃতির এ ধারা প্রায় সর্বাংশেই উন্নত থেকে স্বল্পোন্নত দেশের দিকে ধাবিত।
(গ) তথ্যের পণ্যায়ন বিশ্বায়ন ও বিশ্বায়নের আরেকটি অভিঘাত হলাে এটি পরাজাতিক পশ্চিমা সংস্কৃতিকে আমাদের জীবন যাপনের একমাত্র মডেল হিসেবে চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে ‘প্যাকেটবন্দি দর্শক-শ্রোতা যাদের আনুগত্য ব্রান্ডনেম পণ্যে আবদ্ধ আর সামাজিক বাস্তবতাকে যারা উপলব্ধি করে পণ্য পরিতৃপ্তির মাপকাঠির মধ্য দিয়ে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে এমন এক ভােক্তাসংস্কৃতি যে সংস্কৃতিতে প্রথাগত উৎপাদনমুখী কাজে নীতির চেয়ে ভােগের নীতিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ভােক্তা সংস্কৃতির এ বিস্তার তথ্যকে বিক্রয়যােগ্য, লাভজনক একটি পণ্যে পরিণত করেছে। আর তথ্যকে পণ্যে পরিণত করে একে যত বেশি সম্ভব গ্রাহকের কাছে আকর্ষণীয় করে তােলার তাড়না থেকেই দেখা দিয়েছে তথ্যমাধ্যমের বাণিজ্যিকীকরণের প্রবণতা। তাছাড়া এসব তথ্যমাধ্যম উন্নয়নশীল বিশ্বের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের দারিদ্র্যকে পুঁজি করে উল্টো নিজেদের ব্যবসায় করার অপকৌশল নিয়েই ব্যস্ত।
(ঘ) বিশ্বায়ন ও সমাজব্যবস্থা বিশ্বায়ন আরেকটি অভিঘাত হানছে সমাজব্যবস্থায়। বিশ্বায়নের ফলে তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহ তাদের নিজ নিজ সামাজিক রীতিনীতি, আচার-আচরণ ও মূল্যবােধকে হারিয়ে ক্রমেই একটি পশ্চিমা ধ্যানধারণানির্ভর সমাজব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার সমাজসমূহ তাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলছে এবং তা নতুন প্রজন্মকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। ফলে এ সকল সমাজের কাঠামাে, সামাজিক স্তরায়ন, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক বিশ্বাস ও মূল্যবােধ সর্বত্রই এ ধরনের হযবরল অবস্থা দেখা দিচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিচ্ছে অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য। পরিবার কাঠামােতে আসছে ভাঙন, পরিচ্ছন্নবােধ ও বিশ্বাসের স্থান দখল করছে যৌনতা ও হিংস্রতানির্ভর এক বিকৃত সামাজিক ব্যবস্থা।
(ঙ) বিশ্বায়ন ও শিক্ষা বিশ্বায়নের অভিঘাত থেকে তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থাও মুক্ত নেই। শিক্ষা মূলত মানুষের আত্মিক ও চিন্তাশক্তির বিকাশ, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতার সাথে খাপ খাইয়ে চলার যােগ্যতা অর্জনে সহায়তা করে। বিশ্বায়নের ফলে তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা তার স্থানিক সম্প্রদায়গত (Community) বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ভিনদেশী রঙে একটি মেকি রূপ ধারণ করেছে। এ শিক্ষাব্যবস্থা অভীষ্ট জনগােষ্ঠীর জীবনবােধ ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থারই সৃষ্টি করে থাকে। এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত জনগণও তাদের বাস্তব জীবনে তেমন উপকৃত হতে পারে না। কেননা এ শিক্ষার সিলেবাস, পাঠদান পদ্ধতি এবং অন্তর্নিহিত ধ্যানধারণার সবই অভীষ্ট জনগােষ্ঠীকে একটি ভিনদেশী তথা পশ্চিমা ব্যবস্থার সাথে পরিচিত করে তােলার মানসে রচিত। ফলে এ সকল সমাজে এমন একটি শ্রেণীর জন্ম হচ্ছে, যারা দেশীয় সবকিছুতেই নাক ছিটকায় যা যে কোন জাতির উন্নতির জন্য মারাত্মক হুমকি।
(চ) বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান যুগকে চিহ্নিত করা হচ্ছে মানব ইতিহাসের চতুর্থ যােগাযােগ বিপ্লবের কাল হিসেবে। মানুষ যখন ভাষার ব্যবহার শুরু করল, প্রথম বিপ্লবটি শুরু হয়েছিল তখন। লিখন পদ্ধতির উদ্ভাবন সূচনা করেছিল দ্বিতীয় বিপ্লবের। তৃতীয় বিপ্লটি ঘটেছিল স্থানান্তরযােগ্য মুদ্রাক্ষরভিত্তিক মুদ্রণ ও প্রকাশনা প্রযুক্তির উদ্ভাবনের মাধ্যমে। আর চতুর্থ বিপ্লবটি হচ্ছে ডিজিটাল ইলেকট্রনিক তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান বিপ্লব। উপগ্রহ সম্প্রচার প্রযুক্তি, আধুনিক টেলিযােগাযােগ ব্যবস্থা ও কম্পিউটার -এ তিনের সমন্বয়ে বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে তথ্যের মহাসরণী (Information highway) নামে দ্রুতগতির এক বিস্তৃত যােগাযােগ নেটওয়ার্ক। উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল নির্বিশেষে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি জাতি ও দেশই কোন না কোনভাবে এ যােগাযােগ নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তিগতভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা উন্নত দেশগুলাে দুর্বল তথ্য অবকাঠামাের স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলাের চেয়ে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া থেকে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে। এমনকি এ সকল দেশে উন্নত দেশগুলাের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলে সাংস্কৃতিক অবনয়ন, ব্যক্তির গােপনীয়তা ও নিরাপত্তা লঙ্ন, সমাজের পরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানগুলাের ধ্বংস ও সর্বোপরি সামাজিক ক্ষমতার ভারসাম্য ও অর্থনৈতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ বিনষ্ট হচ্ছে।
বাফার স্টেট বলতে কি বুঝ
উপরােক্ত আলােচনা শেষে বলা যায় যে, বিশ্বায়নের যে বিস্তৃত প্রক্রিয়া ও অভিঘাত তা উন্নয়নশীল বিশ্বকে উন্নত বিশ্বের সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে অনেক সুবিধাদানের কথা ছিল। কেননা বিশ্বায়নের ফলে এ সকল দেশ উন্নত দেশগুলাের খুব কাছাকাছি যাওয়ার সুযােগ পায় এবং আধুনিক জীবনবােধের সাথে পরিচিত হতে পারে। এ জীবনবােধ তাদের একটি উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখায়। উন্নত দেশগুলাের সাথে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত সহযােগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। ফলে অনুন্নত দেশগুলােতে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়। মােটের উপর সকলে লাভবান না হলেও কিছু কিছু দেশ যেমন ঃ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীনসহ আরাে অনেক দেশই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে সক্ষম হয়। এমনকি ক্রমাগত অভিঘাত সহ্য করেও অনেক দেশ তাদের আপন আপন ধ্যানধারণা, প্রতিষ্ঠান, পদ্ধতি টিকিয়ে রেখে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সকল ক্ষেত্রে প্রতিযােগিতার সামর্থ্য অর্জন করছে।
সুতরাং বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকে যদি সবার জন্য উপযােগী করতে হয় তাহলে উন্নত দেশগুলােকে অবশ্যই অনুন্নত দেশের জনগণের লাভালাভের দিকে নজর দিতে হবে। এ জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলােকেও অন্যের সংস্কৃতি গ্রহণে সচেতন এবং আপন আপন সংস্কৃতির উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে। প্রতিযােগিতার মাঠে নেমে প্রতিযােগীর ঘাড়ে দোষ না চাপিয়ে প্রতিযােগীকে হারানাের সামর্থ্য অর্জনের মাধ্যমে জিততে হবে। কেননা আমরা যত অপছন্দই করি না কেন এ মুহূর্তে বিশ্বায়নের বৃহত্তর প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসার সুযােগ নেই।
0 Comments