Hot Posts

6/recent/ticker-posts

সঠিকভাবে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

দৈনন্দিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ নামাজেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যদিও এটি ফরজ ইবাদত নয়, তথাপি এই আমলের প্রয়োজনীয় কম নয়। আজ  আমরা সঠিকভাবে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে জানবো। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এ আমলের ফজিলত তথা উপকার সম্পর্কে জানবো।

সঠিকভাবে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
প্রথমেই আলোচনা করি নিয়ত নিয়ে। যেকোন নামাজের পূর্বেই উক্ত নামাজের জন্য নিয়ত করতে হয়। আমরা সাধারণত আরবিতে নামাজের নিয়ত করে থাকি। যদিও নামাজ আদায়ের জন্য আরবিতেই নিয়ত করতে হবে এমন কোন বিধি-বিধান নেই। অর্থাৎ আপনি আরবি না জানলে আপনার মাতৃভাষা, যেমন বাংলাতেও নিয়ত করতে পারবেন।

যেহেতু আরবি এবং বাংলা যেকোন একটিতে নিয়ত করলেই হবে, তাই আমরা এখানে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। তবে এখানে বলে রাখতে হয়, আপনি আরবিতে নিয়ত করতে গিয়ে যদি ভুল উচ্চারণ করেন, তাহলে হয়তো নিয়তের অর্থ পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই যদি আরবিতেই নিয়ত করতে হয়, তাহলে সম্পূর্ণ নিয়তটি খুব সুন্দর ও সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে হবে।
তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত

نَوَيْتُ اَنْ اسَلَى رَكَعَتِى التَّهَجُّدَ

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ

নাওয়াইতু আনউসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকআতাই সালাতিত্তাহাজ্জুূদী মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা অর্থ

আমি কেবলা মুখী হয়ে দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) প্রতিরাতে তাহাজ্জুদ এর সালাত আদায় করতেন। তাই আমাদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম জানা উচিত এবং সেই অনুযায়ি আমল করা উচিত।

জানা যায়, নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা:) ২ রাকাআত ২ রাকাআত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যেমন: মোট ১০ রাকায়াত তাহাজ্জুদ নামাজ ২ রাকায়াত করে ৫ বারে সম্পন্ন করা যায়। অর্থাৎ আমরা ২ রাকায়াত করে যত রাকাআত ইচ্ছে আদায় করতে পারবো।


যদিও তাহাজ্জুদ নামাজ ২ রাকায়াত করে আদায় করা হয়, কিন্তু মহানবী (স:) লম্বা কেরাতে এ নামাজ আদায় করতেন। তাই দীর্ঘ কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম। যদিও অন্যান্য নামাজের মতই যে কোনো সুরা দিয়ে এ নামাজ পড়া যায়।

তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য নিচের ধাপগুলো লক্ষ্য করি:

  • প্রথমে তাকবিরে তাহরিমা অর্থাৎ ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নিয়ত বাঁধতে হবে।
  • এরপরে ছানা পড়তে হবে।
  • অন্যান্য নামাজের মত প্রথমে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে।
  • সুরা ফাতেহার পরে মিলিয়ে অন্য যেকোন সুরা পড়তে হবে।

পূর্বেই উল্লেখ করেছি, শেষ পয়গম্বার হযরত মুহাম্মদ (সা:) দীর্ঘ সময় নিয়ে অনেক লম্বা কেরাত পড়তেন। এরপর অন্যান্য নামাজের মতই রুকু, সেজদা আদায় করতেন। অর্থাৎ আমাদের প্রাত্যাহিক আদায় করা ৫ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের পদ্ধতিগত বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। মহানবী (সা:) এভাবেই দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করতেন।

উল্লেখ্য, প্রতিরাতে এভাবে ২-২ রাকাআত করে মোট ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত?

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে এ নামাজের রাকাআত সংখ্যা কত? অনেকেই তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত তা জানেন না। তাহাজ্জুদের সালাত সর্বনিম্ন ২ রাকাআত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাআত। অর্থাৎ আপনি ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়তে পারবেন। জানা যায়, নবী করীম (সা:) ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন। তাই ধর্ম বিশারদগণ ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ আদায় করাকেই উত্তম মনে করেছেন।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময়

উপরের আলোচনায় আমরা সঠিকভাবে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে ধারণা পেলাম। এখন আমাদের জানা উচিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় কোনটি বা তাহাজ্জুদ নামাজ কখন পড়তে হয়। সাধারণত, ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকেই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়। ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত আপনি এ নামাজ আদায় করতে পারবেন।

তবে অর্ধ রাত অর্থাৎ রাত ১২ টা এর পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। আর শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম। কারণ, শেষ রাতে নামাজে বসে বান্দা আল্লাহার কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ অবশ্যই দান করেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব

আল্লাহ তা’আলার প্রতি বান্দার প্রতিটি ইবাদতের ফজিলত রয়েছে। আর বান্দা যখন রাত জেগে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তার প্রতি রহমতের ভাণ্ডার উজার করে দেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন, নবীজি (সা:) বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ নামাজ তথা রাতের নামাজ।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)



বুখারি ও মুসলিম শরীফের হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা:) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব! কে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করব! আর কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব!’

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে তাহাজ্জুত নামাজ অনেক বরকতময় একটি ইবাদত ও আমল। এই নামাজে আল্লাহর সাথে বান্দার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। তাই মহান আল্লাহ আমাদেরকে বেশি বেশি তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের সক্ষমতা দিন। আমিন।

Post a Comment

0 Comments