Hot Posts

6/recent/ticker-posts

নারীবাদ কি? নারীবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর


নারীবাদঃ

নারীবাদ ১৮৮০ সালে বৈশ্বিক আন্দোলন হিসেবে ফ্রান্সে, ১৮৯০ সালে যুক্তরাজ্যে এবং ১৯১০ সালে যুক্তরাষ্টে নারীবাদ শব্দটির প্রচলন হয়। নারীবাদ হলো নারী ও পুরুষের মধ্যকার সমতার একটি মতবাদ, যাতে নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্য বিস্তার রোধে নারীদের সংগঠিত হওয়ার উপর এবং সামাজিক জীব হিসেবে সমঅধিকার ও দায়িত্বের ভিত্তিতে নারী-পুরুষের জন্য সমাজকে নিরাপদ আবাসস্থলে রূপান্তরিত করার উপর গুরুত্ব দেয়।

নারীবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশঃ-

নারীবাদেরর সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।তবে কোথায়,কখন,কে নারীর প্রতি বৈষম্য এবং নারী-পরুষ সমানাধিকারের প্রশ্ন প্রথম উস্থাপন করেছিলেন,সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।ফরাসি গবেষক,লেখক ও বুদ্ধিজীবি সিমন দ্য বুভোয়ার (Simone de Beauvoir) এর মতে,যে মহিলা নারীর স্বপক্ষে প্রথম কলম তুলে ধরেছিলেন তার নাম খ্রিষ্টিন ডি পিজান (Christine de Pusan)।১৯৬২ সালে ওলান্দাজ নারী মার্গারেট লকাস রচিত 'Female Orations)' বা নারী ভাষণ বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম 'নারীবাদী সাহিত্য' হিসেবে পরিচিত হয়।সেখানে নারীর পরাধিনতা ও অসম অধিকারের বিষয়টি বিধৃত হয়েছে।এছাড়া নারীবাদের ইতিহাসে প্রথম নারীবাদী হিসেবে যায় নাম পাওয়া যায়,তিনি হলেন সপ্তদশ শতাব্দির ফরাসি নারী পলেইন ডি লাব্যারে।সে সময়েই তিনি লিখেছিলেন,"পুরুষ কর্তৃক নারী সম্পর্কে যা কিছু লেখা হয়েছে,তার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতে হয়।কারন এক্ষেত্রে পুরুষ একই সাথে অভিযুক্ত ও বিচারকের আসনে আসীন"নারীবাদের উদ্ভব হয়েছিল ইউরোপ ও আমেরিকা উদার ও গনতান্ত্রীক সহরাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যদিয়ে।মূলত পাশ্চাত্যের ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গনতন্ত্রের মধ্যে নারীবাদের মূল প্রেরোণা নিহিত।নারীবাদী বিভিন্ন আন্দোলন মূলত এসব তত্ত্বকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয়েছে।নারীবাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশকে নিম্নোক্ত দু'টি পর্যায়ে বা স্তরে বিভক্ত করে আলোচনা করা হলল-

নারীবাদের উদ্ভবের প্রথম পর্যায়পর্যায়
অষ্টাদশ শতাব্দির ৭০এর দশক থেকে শুরু হয় নারীবাদ উদ্ভবের প্রথম পর্যায়। মূলত ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই আমেরিকায় "স্বাধীণতার ঘোষণাপত্র"প্রণীত হলে এবং ১৭৮৭ সালে মার্কিন সংবিধান গৃহিত হলে,সে সময় থেকে নারীরা সমানাধিকারের দাবি জানাতে থাকেন এরপর ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ'সাম্য,মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্ব (Liberty,Equality and Fraternity) এই মহান বাণী নারীর অধিকারকে সামনে নিয়ে আসে।কেননা এই বাণী কেবল পুরুষদেও ক্ষেত্রেই প্রযজ্য হয়।তাই তখন নাগরিক অধিকারের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য তথা স্বীয় ভোটাধিকার লাভের জন্য আন্দোলনে যেতে হয় নারীকে।১৭৯০ সালে ফ্রান্সে পুরুষের পাশাপাশি নারী অধিকারের পক্ষে'Declaration of the Rights of Women and the Female Citizen's গ্রন্থটি রচনা করেন অলিম্প ডি গুৎজ(Olympe De Gouges)।তিনি প্রশ্ন উস্থাপন করেন,"নারীদের যদি ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়ার অধিকার থাকে,তবে পার্লামেন্টে যাওয়ার অধিকার থাকবে না কেন?"তবে সত্যিকারের নারীবাদী কন্ঠ শোনা যায় ইংরেজ লেখিকা মেরী ওলস্টোনক্রাফট(Mary Wollstonecraft)এর যুগান্তকারী গ্রন্থে 'A Vindication of the Rights of Women' প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে।এ গ্রন্থটি নারীবাদী চিন্তার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে।মেরীর পরে নারীর অধিকারের দাবি শিধুমাত্র রচনা- গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি,নারী আন্দোলনে রুপ নেয়।একাধিক নারী সক্রিয় আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং নারীবাদী হিসেবে সক্রিয়ভাবে চিহ্নিত হন।
ঊনবিংশ শতাব্দীর ৩০-এর দশক থেকে নারীবাদী আন্দোলন দানা বাধঁতে থাকে।

Post a Comment

0 Comments