নমুনায়ন বলতে কী বুঝ ,নমুনায়নের সুবিধা ও অসুবিধা আলােচনা কর

 

নমুনায়ন : নমুনায়ন একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির নাম। এ পদ্ধতির জন্য সমগ্রক থেকে একটি নমুনা বাছাই করা হয়।

 প্রামাণ্য সংজ্ঞা : নমুনায়ন সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে মতামত ব্যক্ত করেছেন। নিম্নে সে বিষয়ে আলােচনা করা হলাে : 

 S. P. Gupta এবং M. P. Gupta এর মতে, "Sampling is only a total which helps to know the characteristics of the universe or population by examining only a small part of it." অথাৎ, নমুনায়ন হলাে সমগ্রকের একটি পরীক্ষালব্ধ অংশমাত্র যা সমগ্রকের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে পারে। তারা নমুনায়নের সংজ্ঞায় সমগ্রক সম্পর্কে প্রতিনিধিত্বকে আলােচনায় এনেছেন। মূলত সমগ্রকের একটি উপযুক্ত প্রতিনিধি নমুনায়নের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায় ।

  Black ও Champion এর মতে, "The process of drawing those elements from the larger population or universe is called sampling." অর্থাৎ, নমুনায়ন হলাে বৃহত্তর সমগ্রক থেকে কিছু উপাদান বাছাই করার প্রক্রিয়া। 

নমুনায়ন প্রসঙ্গে Earl R. Babbie বলেছেন, “বৃহত্তর উপাদান সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে বৃহত্তর উপাদান থেকে কতিপয় উপাদান নির্বাচনের প্রক্রিয়াই হচ্ছে নমুনায়ন।” 

নমুনায়নের সুবিধা : নমুনায়ন বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। নিম্নে নমুনায়নের সুবিধাগুলাে আলােচনা করা হলাে : 

 ১ ব্যয় কম : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় ব্যয় কম। এ প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধানকার্য পরিচালনার জন্য শুমারি জরিপ অপেক্ষা অনেক কম ব্যয় হয়। নমুনায়নে সমগ্রকের একটি অংশ নির্বাচন করা হয় বলে এর ব্যয় কম।

 ২. স্বল্প সময় : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় শুমারি অনুসন্ধানকার্য পরিচালনা অপেক্ষা স্বল্প সময় ব্যয় হয়। জরুরি বিষয়ে অল্প সময়ে অনুসন্ধানকার্য পরিচালনার জন্য নমুনায়ন অধিক ফলপ্রসূ। নমুনায়নে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করা হয় বলে এতে স্বল্প সময় ব্যয় হয়। 

 ৩. দ্রুত ফলাফল প্রদান : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় শুমারি অনুসন্ধানকার্য পরিচালনা অপেক্ষা দ্রুত ফলাফল প্রদান করা যায়। কোন বিষয়ে যদি দ্রুত ফলাফল প্রদান সম্ভব হয়, তাহলে গবেষণাকার্য দ্রুত সম্পাদন করা যায়। নমুনায়নের মাধ্যমে। | কোন বিষয়ে দ্রুত ফলাফল প্রদান করা যায়। 

৪. কম শ্রম ব্যয় : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় কতিপয় বিষয়ে গবেষণা করা হয়। এতে ব্যয় কম হয়। তাছাড়া স্বল্প সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। নমুনায়নে শ্রমও কম ব্যয় হয়। 

৫. নির্ভরশীল : নমুনায়নে স্বল্প বিষয়ে গবেষণা করা হয়। স্বল্প বিষয় গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর। | ফলে নমুনায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বেশি নির্ভরশীল হয়। | 

৬, সঠিক তথ্য প্রদান : নমুনায়নে বাছাইকৃত অংশ পর্যবেক্ষণ করা হয়। এজন্য নমুনায়ন কোন বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদানে সক্ষম। 

৭. প্ৰশিক্ষণগত সুবিধা : নমুনায়নে অপেক্ষাকৃত কমসংখ্যক কর্মীর প্রয়ােজন হয়। কেননা, এতে উপাত্তের  সংখ্যা কম। 

 নমুনায়নের অসুবিধা : নমুনায়ন বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলেও এর কিছু অসুবিধা আছে। নিম্নে এগুলাে আলােচনা করা হলাে : 

১. প্রতিনিধিত্নের সমস্যা : নমুনায়ন প্রক্রিয়া সমগ্র অংশ থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয় মাত্র। প্রতিনিধিত্বের সমস্যা এ প্রসঙ্গে থেকে যেতে পারে। অনেক সময় প্রতিনিধিত্বশীল একক কোন বিষয়ে সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে । সঠিকভাবে কোন একক প্রতিনিধিত্ব করতে না পারলে কোন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। 

নমুনা প্রাপ্তির সমস্যা : নমুনায়নে ক্ষুদ্র অংশের বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। সমগ্ৰক হতে যে কতিপয় বিষয়। নমুনায়ন করা হয়, সেগুলাে বিশ্লেষণের মাধ্যমেই গােটা বিষয় সম্পর্কে ধারণা করা হয়। অনেক সময় নির্বাচিত অংশ পরবর্তীতে গবেষণার জন্য সহজভাবে পাওয়া যায় না। 

৩, দক্ষতার প্রয়ােজন : সঠিকভাবে নমুনায়ন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য দক্ষতার প্রয়ােজন। উপযুক্ত ও সঠিক নমনা নির্বাচনের জন্য দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির প্রয়ােজন। আবার দক্ষ ব্যক্তির অপ্রতুলতাও রয়েছে। 

৪, নমনার বৈচিত্র্য : বৈচিত্র্যময় পৃথিবীর সবকিছুই বিচিত্র। সমগ্রকে প্রতিটি একক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমজল । নমুনায়নে নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করা হয়। এ নিদিষ্ট বিষয়ের সাথে অপরাপর বিষয়ের মিল না থাকার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।


Post a Comment

Previous Post Next Post