ভারতের সংবিধানের বিকাশঃ
১৯৪৭ সালের ২০ শে আগস্ট বি. আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে
একটি খসড়া সংবিধান তৈরীর জন্য কমিটি গঠন করা হয়।
১৯৪৮ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি এ কমিটি গণপরিষদে একটি
খসড়া সংবিধান পেশ করে। সুদীর্ঘ আলাপ আলােচনার
পর সংবিধানটি গৃহীত হয়। অন্যান্য দেশের মত ভারতের সংবিধানও একটি গতিশীল দলিল।
বিগত বছরগুলােতে কেবল আয়তনের দিক থেকেই নয়, বক্তব্য ও উদ্দেশ্যের দিক থেকেও সংবিধানের বহু
পরিবর্তন এবং বিকাশ সাধিত হয়েছে।
সাংবিধানিক রীতি-নীতিঃ
ভারতের সংবিধানের অনুপূরকরূপে সাংবিধানিক নীতি-নীতির উদ্ভব ঘটেছে। এতে সংবিধানিক আইনের অপূর্ণতা দূর করা সম্ভব হয়েছে এবং সংবিধানের গতিশীল চরিত্রও অব্যহত থেকেছে। ভারতের সংবিধানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এই রীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সাংবিধানিক নজিরও সংবিধান বিকাশের একটি কার্যকরী মাধ্যম। তবে নজির যেমন সৃষ্টি হয়েছে তা লংঘিতও হয়েছে। রাজনীতির দ্রুত পট পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতপক্ষে নজির রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টে বিচারপতি নিয়ােগ, প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর পর অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী নিয়ােগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাধারণত সাংবিধানিক নজির অনুসরণ করা হয়।
সংশােধন পদ্ধতি ঃ
সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে ভারতের সংবিধানের বিকাশ ঘটেছে। সংবিধানের গতিশীলতা বজায় রাখার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলাে চাহিদা অনুযায়ী-এর সংশােধন। সংশােধন বলতে সংযােজন এবং বর্জন উভয়ই বুঝায়। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত মােট ৭৮ বার ভারতের সংবিধান সংশােধিত হয়েছে।
আইন প্রণয়নঃ
সংসদ প্রণীত বিভিন্ন আইনের মাধ্যমে সংবিধান বিকশিত এবং সম্প্রসারিত হয়েছে। সংবিধানে সংসদের হাতে কেন্দ্রীয় তালিকা ও যুগ্ম তালিকা এবং বিশেষ ব্যবস্থায় রাজ্য তালিকায় আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে। বিদেশের সাথে সন্ধি ও চুক্তি, মৌলিক অধিকার প্রয়ােগ, জনপ্রতিনিধিত্ব, বিচার বিভাগীয় পদ্ধতি, দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইন, এবং রাজ্য পুনঃগঠন বিষয়ক বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করে সংসদ সংবিধানকে অর্থবহ ও পূর্ণাঙ্গ করে তুলেছে।
আদালতঃ
বিচার-বিভাগীয় সিদ্ধান্তকে ভারতের সংবিধান বিকাশের একটি পদ্ধতি হিসাবে বিবেচনা করা যায়। আদালত আইনের ব্যাখ্যা ও বৈধতা বিচারের মাধ্যমে সাংগঠনিক আইনের ত্রুটি দূরীকরণে সাহায্য করে।
শাসন বিভাগীয় কার্যকলাপ সংবিধান বিকাশে সাহায্য করেছে। শাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্ধারিত নীতি সংবিধানকে সরাসরি প্রভাবিত করেছে। বিভিন্ন সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতি ও কার্যক্রম সংবিধানের বিভিন্ন ধারা পরিবর্তন এবং সংবিধানের বিকাশে সাহায্য করেছে। সুতরাং, আমরা দেখতে পাই উপরােক্ত বিষয়াবলী ভারতের সংবিধান বিকাশে সহায়তা করেছে।
ভারতের সংবিধানের মূল বৈশিষ্ট্যগুলাে নিম্নরূপঃ
• সংবিধানের বিশালতা বা বৃহৎ আয়তন;
ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাব;
বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও চিন্তার প্রভাব;
প্রস্তবনা;
মৌলিক অধিকার;
নির্দেশমূলক নীতি;
নাগরিকের কর্তব্য;
ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র;
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা;
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের অস্বীকৃতি;
সংসদীয় শাসনব্যবস্থা;
সংসদের সার্বভৌমিকতা এবং আদালতের প্রাধান্যের সমন্বয় সাধন;
সুপরিবর্তনীয়তা এবং দুস্পরিবর্তনীয়তার সম্মিলন;
শাসনতান্ত্রিক রীতি-নীতি;
সার্বজনীন ভােটাধিকার;
দেশীয় রাজ্যের অন্তর্ভুক্তি;
সমাজের অনুন্নত অংশের জন্য বিশেষ সংরক্ষণ ব্যবস্থা;
বিশেষ পদাধিকারী ও সংস্থার আলােচনা;
জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ঘােষণা;
ভাষা সম্পর্কিত বক্তব্য;
দলত্যাগ বিরােধী ব্যবস্থা।
সংবিধান সংশােধন পদ্ধতি
ভারতের সংবিধানের বিশেষ কয়েকটি ধারা আছে যাদের সাধারণ আইন প্রণয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে সংসদ সংশােধন করতে পারে। সংসদের যে কোন কক্ষেই বিল উত্থাপন করা যায়। প্রত্যেক কক্ষে উপস্থিত এবং ভােটদানকারী সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন লাভ করলে বিলটি সংসদ কর্তৃক অনুমােদিত হয়েছে বলে গণ্য করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতির সমর্থনের দরকার হয়।
সংবিধানের যে সব বিষয় ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামাে অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্যের স্বার্থ এবং এক্তিয়ারের সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িত সে বিষয়গুলাের সংশােধন পদ্ধতি ৩৬৮ (২) নং ধারায় উল্লেখ আছে। এ সংশােধনের জন্য প্রত্যেক সংসদের যে কোন কক্ষে বিল উত্থাপন করা যায়। বিল অনুমােদনের জন্য ন্যনতম পক্ষে সংসদের প্রত্যেক কক্ষে উপস্থিত এবং ভােটদানকারী সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়ােজন। কিন্তু ঐ দুই তৃতীয়াংশকে সংশ্লিষ্ট কক্ষের মােট সদস্যসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠের সমান হতে হবে। এভাবে সংসদের উভয় কক্ষ কর্তৃক অনুমােদিত হলে সংশ্লিষ্ট বিলকে অঙ্গ রাজ্যের আইন সভার অনুমােদন নিয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমতি নেয়া হয়।
সংবিধানে ৩য় অংশে সংযােজিত মৌলিক অধিকার এবং ৪র্থ অংশে বর্ণিত নির্দেশমূলক নীতি এবং পূর্বে আলােচিত সংশােধনে ১ম ও ২য় পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত নয়, এ বিষয়গুলাে সংশােধনের জন্য সংসদের যে কান কক্ষে বিল উত্থাপন করা হয়। অনুমােদনের জন্য প্রত্যেক কক্ষে উপস্থিত এবং ভােটদানকারী সদস্যদের ন্যূনতম দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়ােজন। তবে প্রত্যেক কক্ষের উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশকে ঐ কক্ষের মােট সদস্য সংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠের সমান হতে হবে। এভাবে সংসদের উভয় কক্ষ দ্বারা অনুমােদিত হলে বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য প্রেরণ করা হয়। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমােদিত হলে বিলটি আইনে পরিণত হয়। ঐ আইন অনুসারে সংবিধান সংশােধিত হয়।
0 Comments