Hot Posts

6/recent/ticker-posts

প্রশ্নমালার সংজ্ঞা দাও, উত্তম প্রশ্নমালা তৈরিতে কি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ

 সামাজিক গবেষণায় প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী কৌশল হচ্ছে প্রশ্নমালা। এজন্য প্রশ্নমালা পদ্ধতিকে জরিপ কার্যের আত্মা বলে অভিহিত করা হয়। সাধারণত বৃহৎ আকারের সমগ্রকের অন্তর্ভুক্ত প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা একক থেকে উপাত্ত সংগ্রহের জন্য এ কৌশলটি অত্যন্ত উপযােগী। 
প্রশ্নমালা :  সাধারণভাবে বলা যায় কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রয়ােজনীয় তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিষয় সংশ্লিষ্ট এবং বিষয় সম্পর্কিত কবিতার প্রশ্নের সুবিন্যস্ত লিখিত সমাহারই হলাে প্রশ্নপত্র বা প্রশ্নমালা। 
'Good and Hall-এর মতে, “সাধারণভাবে প্রশ্নমালা হচ্ছে পরম ব্যবহার করে প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করার একটি কৌশল যা উত্তরদাতা নিজে পূরণ করেন।” 
Bogardus-এর মতে, “প্রশ্নমালা হচ্ছে কতিপয় প্রশ্নের তালিকা যেগুলাের উত্তর দেয়ার জন্য কতিপয় ব্যক্তির নিকট প্রেরণ করা হয়।” 
Kenneth D. Bailey বলেছেন, “প্রশ্নপত্র হচ্ছে কোন একটি সমস্যার বিভিন্ন বিষয় বা দিক সম্পর্কে জানার জন্য অনুমিত সকল প্রশ্নের সমন্বয়। 
 উইলকিনসন এবং ব্যান্ডারকার বলেন, “ফরম এর উপর সুনির্দিষ্ট ক্রমানুসারে মুদ্রিত কতিপয় প্রশ্নের সমন্বয়ে প্রশ্নমালা গঠিত।” 
 সতরাং কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে উপাত্ত বা তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ফরমের উপর বিষয় সংশ্লিষ্ট বা বিষয় সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট ক্রমানুসারে মুদ্রিত কতিপয় প্রশ্নের সমাহারই হলাে প্রশ্নমালা। 

উত্তম প্রশ্নমালা তৈরিতে সতর্কতা অবলম্বন : 
সামাজিক গবেষণার তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রশ্নমালা একটি 'ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রশ্নমালা তৈরির সময় কতকগুলাে বিয়য়ে সর্তকতা অবলম্বন করা প্রয়ােজন। একটি উত্তম প্রশ্নমালা তৈরির ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়ােজন সেগুলাে নিম্নে আলােচনা করা হল 
১. গবেষণার উদ্দেশ্য ; উত্তম প্রশ্নমালা অবশ্যই গবেষণার উদ্দেশ্যর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে প্রশ্নমালা প্রণয়ন করা হয়েছে তা অবশ্যই উত্তম প্রশ্নমালায় উল্লেখ করতে হবে। গবেষণা কি সমস্যা অনুসন্ধান করবে, কি লক্ষ্য অর্জন করবে বা কি অনুমান যাচাই করবে এসব উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখে প্রশ্নমালা তৈরি করতে হবে। 
২. সহজ-সরল ভাষা ব্যবহার : উত্তম প্রশ্নমালায় ভাষা অবশ্যই সহজ-সরল হতে হবে । উত্তরদাতা যাতে সহজে প্রশ্নপত্রের উদ্দেশ্য বুঝতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রশ্নমালায় যতদূর সম্ভব টেকনিক্যাল, দ্বার্থক, দুর্বোধ্য ও জাচল শব্দ পরিহার করা উচিত। কেননা এসব শব্দের অর্থ বিভিন্ন জনের নিকট বিভিন্ন রকম হয়। ফলে প্রশ্নোত্তর। অপ্রাসঙ্গিক তথ্যের সাথে মিশ্রিত হয়ে পড়ে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। 
৩. প্রশ্নের আকৃতিগত দিক : উত্তম প্রশ্নমালায় প্রশ্নের আকার অবশ্যই ছােট হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ প্রশ্নপত্রের আকার বড় হলে উত্তর দিতে অনেক সময়ের প্রয়ােজন হয়। প্রশ্নপত্রের আকার বড় দেখলে অনেক উত্তরদাতা প্রশ্নের উত্তর দিতে নিরুৎসাহবােধ করে। তাই উত্তম প্রশ্নমালা তৈরিতে প্রশ্নের আকার যাতে ছােট হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। 
 ৪, ধারাবাহিকতা : উত্তম প্রশ্নমালা তৈরির সময় অবশ্যই প্রশ্নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা প্রয়ােজন। অর্থাৎ কোন প্রশ্নের পর কোন প্রশ্ন থাকবে তা বিশেষ নিয়মে সাজানাে উচিত। কেননা প্রশ্নপত্রের ধারাবাহিকতা না থাকলে উত্তরদাতা অনেক সময় বিরক্ত হয় এবং সঠিক উত্তর বের হয়ে আসে না। 
৫. ব্যক্তিগত ও গােপনীয় প্রশ্ন পরিহার : প্রশ্নপত্রে কোন ব্যক্তিগত ও গােপনীয় বিষয় আছে কিনা সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা ব্যক্তিগত ও গােপনীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে উত্তরদাতা উৎসাহ বােধ করেন না। তাই উত্তম প্রশ্নমালায় অবশ্যই ব্যক্তিগত ও গােপনীয় প্রশ্ন পরিহার করতে হবে। ৬. প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা : উত্তরদাতা যাতে প্রশ্নপত্র সঠিকভাবে পূরণ করতে পারেন সেজন্য প্রশ্নপত্রের সাথে প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা সংযােজন করা আবশ্যক। উত্তম প্রশ্নমালায় প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই প্রশ্নমালায় প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা আছে কিনা সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 
৭. সংবেদনশীলতা : প্রশ্নমালা তৈরির সময় অবশ্যই সংবেদনশীল প্রশ্ন পরিহার করতে হবে। কেননা সংবেদনশীল। প্রশ্ন দেখে অনেক সময় উত্তরদাতা রেগে যেতে পারেন। ফলে প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া সম্ভব হয় না এবং গবেষণাও নির্ভুল হয় না। তাই প্রশ্নমালা তৈরির সময় সংবেদনশীলতা পরিহার করা আবশ্যক। 
৮. উত্তরদাতাকে নিশ্চয়তা প্রদান : উত্তম প্রশ্নমালা তৈরিতে উত্তরদাতাকে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। এতে উত্তরদাতাকে এ মর্মে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, তার প্রদত্ত উত্তরের গােপনীয়তা রক্ষা করা হবে এবং গবেষণার উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে এ তথ্য ব্যবহার করা হবে না। এর ফলে উত্তরদাতা নির্ভয়ে উত্তর প্রদানে আগ্রহী হন। 
৯, আবদ্ধ আকৃতির প্রশ্ন : উত্তম প্রশ্নমালায় প্রশ্নগুলাের সুনির্দিষ্ট উত্তর না থাকা অর্থাৎ প্রশ্নগুলাে আবদ্ধ প্রকতিরই। হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা প্রশ্নপত্রের প্রশ্নগুলাের সঠিক ও সুনির্দিষ্ট উত্তর থাকলে উত্তরদাতা সহজেই প্রশ্নের উত্তর দিতে। পারেন এবং গবেষণাও নির্ভুল হয়। 
১০, নিরপেক্ষতা ; প্রশ্নমালা তৈরির সময় অবশ্যই নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ উত্তম প্রশ্নমালায় এমন নিরপেক্ষ প্রশ্ন করতে হবে যেন কোন প্রকার পক্ষপাতদুষ্টতা ছাড়াই উত্তরদাতার পক্ষে উত্তর দেয়া আপনি ধুমপান করেন না, তাই নয় কি? এ প্রশ্নটির নিরপেক্ষ রূপ হবে আপনি কি ধমপান করেন, 
১১. গণনামূলক প্রশ্ন পরিহরি : উত্তম প্রশ্নমালায় অবশ্যই গণনামূলক প্রশ্নপত্র পার করতে তার । অনেক সময় গণনা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রশ্নপত্র তৈরির সময় এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে
১২. উত্তরদাতার কাছে বােধগম্য : প্রশ্নমালা অবশ্যই উত্তরদাতার কাছে বােধগম্য হতে হবে। কেননা , প্রশ্ন বুঝতে না পারে তাহলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে না। 
 ১৩. প্রশ্নপত্রের পূর্ব যাচাইকরণ : গবেষণার কাজ পুরােপুরিভাবে শুরু করার পূর্বে সংশিষ্ট গতে .. প্রশমালাটি বিশেষ এলাকার জন্য উপযুক্ত কি না তা পূর্ব যাচাই করে নিতে হবে। অর্থাৎ উত র নিতে হবে। অথাৎ উত্তম প্রশ্নমালা অবশ্যই পূর্ব : যাহত হতে হবে। কেননা সূত্রে যাচাই করলে প্রশ্নপত্রে ভুল থাকলে সেগুলাে সংশােধন করে । পৃর্ব যাচাইকরণ হয়েছে কি না সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

Post a Comment

0 Comments