Hot Posts

6/recent/ticker-posts

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য

 


দক্ষিণ এশিয়া রাজনৈতিক ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই অঞ্চলে জনসংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি। যার কারণে বিশ্ব রাজনীতিতে এই অঞ্চলের গুরুত্ব অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ থেকে এই অঞ্চলের মানুষ ব্রিটিশ ঔপনিবেশকতা মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করে। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই আন্দোলন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই এই আন্দোলন দমাতে ব্রিটিশ সরকার হিমশিম খেতে শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার তাদের সাম্রাজ্যগুলো পরিচালনা করতে ব্যার্থ হয় যার কারণে ভারতবর্ষে তাদের আর টিকে থাকা সম্ভব হয় না।

এই ভারতবর্ষ থেকে তাদের চির বিদায় নিতে হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বাতি নিভিয়ে। শুরু হয় ভারতবর্ষের সোনালীদিন। দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলো হল, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রিলংকা। এই পর্বে আলোচনা করব দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশগুলোর রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে।

ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিঃ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতিতে ধর্মের যথেষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই অঞ্চলে মানুষ ধর্মীয় দল নিয়ে রাজনীতি করতে খুবই পছন্দ করে। রাজনীতির ফলাফলে ধর্মীয় ইস্যু অত্যন্ত বিরাট ভুমিকা পালন করে। ধর্মীয় মতবাদকে এই অঞ্চলের মানুষ খুব শ্রদ্ধার সাথে দেখে। এদের ভেতর, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত অন্যতম।

জাতীয়তাবাদঃ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য পতনের পেছনে এই অঞ্চলের মানুষের জাতীয়তাবাদ অগ্রগণ্য। জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে এই অঞ্চলে রাজনৈতিক দল গড়ে উঠে। সেই দলের প্রধানকে তারা জাতীয় নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করে। সেই জাতীয়তাবাদ আজ দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতা বিন্যাসে প্রধান ভূমিকা পালন করে। দক্ষিণ এশিয়ার এই জাতীয়তাবাদী দল আজ প্রায় রাষ্ট্রের ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

জাতীয় নেতার ভূমিকাঃ দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য পতনের জন্য প্রতি দেশে কিছু রাজনৈতিক নেতার আবিভার্ব ঘটেছে। যারা তাদের রাজনৈতিক বুদ্ধি ও সম্মোহনি বক্তব্য দিয়ে দেশের মানুষকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যুক্ত করেছেন তাদের দেশকে স্বাধীন করার জন্য। তেমন কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা হল, ভারতের মাহাত্নাগান্ধী, মায়ানমারের ইউ মিন, পাকিস্তানের জিন্নাহ, বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান।

রাজনৈতিক দলের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিঃ এই অঞ্চলের রাজনীতি বিশুদ্ধ ভাবে গড়ে উঠতে পারেনি তাদের ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গির কারণে। এই অঞ্চলে সামাজিক কাজ ও ব্যাক্তিগত কাজকে একই চোখে দেখা হয়। যার কারণে এই অঞ্চলের রাজনীতি গড়ে উঠেছে ক্ষমতা, শক্তি, পদমর্যাদা ও সামাজিক মর্যাদার ভিত্তিতে। যোগ্য রাজনৈতিক নেতার অভাব লক্ষ্য করা যায় এখানে।

বিদেশি রাজনৈতিক নীতির আমদানি করাঃ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে নিজেরদের দেশের নীতি ব্যাবহার না করে অন্য দেশের রাজনৈতিক মতবাদ বা নীতিকে গ্রহণ করে। যার কারণে এই অঞ্চলে নিজেদের রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্ক নাই বললেই চলে। তারা মার্ক্সবাদ, সমাজতন্ত্র, গনতন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

ব্যক্তিতান্ত্রিক দলঃ দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ কোন রাজনৈতিক দলকে আদর্শগত ভাবে গ্রহণ না করে সেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। যার কারণে এই অঞ্চলে সত্যিকারের রাজনৈতিক আদর্শ তৈরি না হয়ে ব্যক্তির রাজনীতির অন্ধ ভক্ত হিসেবে তৈরি হয়। এছাড়া দলের নেতা নির্বাচন করে কোন প্রকার সামাজিক জনপ্রিয়তা ছাড়াই। এই অঞ্চলে দলের সঠিক আদর্শ নাই বলে নেতাগণ দলের তোষামদিকে আদর্শ বলে মনে করেন। এইটাই অঞ্চলের নেতাদের বৈশিষ্ট্য।


বিরোধি দল নিপিড়নঃ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বিরোধি দলের নেতা ও কর্মীরা সরকারে নির্যাতনের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়।

একগুয়েমি রাজনীতিঃ দক্ষিন এশিয়ার রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলকে দেশের মানুষের সার্থে কাজ না করে এলিট শ্রেণীর মানুষের নির্দেশে তারা দল চালায়। তাই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সাধারণ জনগণের কথা চিন্তা না করে তারা একগুয়েমি করে থাকে। তাদের আচরণে কোন নমনীয়তা দেখা যায় না।

অসহিষ্ণুতাঃ এই অঞ্চলে কোন সহিষ্ণুতার লক্ষন দেখা যায় না। যার কারণে এখানে ক্ষমতার কোন্দল লেগেই থাকে। গণতান্ত্রিকতার অভ্যাস এই অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতাদের ভেতর নেই। কিন্ত কথায় কথায় রাজনৈতিক নেতাগণ নিজেদের গণতন্ত্রের পূজারী হিসেবে প্রকাশ করে। রাজনৈতিক দ্বন্দ, সংঘাত এই অঞ্চলের রাজনীতির অন্যতম দিক। বৈদেশিক প্রভাবঃ এই অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতাগণ আন্তর্জাতিক রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হন। এই অঞ্চলের সমস্যা তারা নিজেরা না মিটেয়ে অন্য দেশের রাজনৈতিক সমাধানের আশায় থাকেন। যার কারণে অল্প সমস্যা থেকে পরিবর্তে আরো বেশি সমস্যা তৈরি হয়। নিজের দেশের সমস্যার কথা না ভেবে তারা বিদেশি প্রভুর সমস্যা নিয়ে সব সময় চিন্তিত থাকে।

দলীয় রাজনীতিঃ এই অঞ্চলের মানুষ তাদের দলের আদর্শ অনুসরণ না করে নেতাদের অনুসরণ করে বেশি। তাদের দলের চেয়ে নেতা বড়। যার কারণে নেতাগণ দলের নীতির প্রতি আনুগত্য না দেখিতে তার নিজের মত সিদ্ধান্ত নেয়। এই ভাবে এই দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি পরিচালিত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ ধরে।


Post a Comment

0 Comments